স্টকে বিনিয়োগের পূর্বে যে বিষয়গুলো জানা দরকার
স্টক বা শেয়ারে বিনিয়োগ আপনার কাছে খুব কঠিন মনে হতে পারে যদি আপনি কি করছেন সে সম্পর্কে আপনার বিস্তারিত ধারণা না থাকে। স্টকে বিনিয়োগ সম্পর্কে “কখন শেয়ারে বিনিয়োগ করবো”, “এখন শেয়ারে বিনিয়োগ করার উপযুক্ত সময় কিনা” ইত্যাদি নানা রকম প্রশ্ন আসতে পারে। আপনার এসকল দুশ্চিন্তার সমাধান হিসেবে বলা যায় যে স্টকে বিনিয়োগ করা কোনভাবেই রকেট সায়েন্সের মত জটিল বিষয় না। কিছু কৌশল রয়েছে যেগুলো ব্যবহার করে আপনি নিরাপদে এবং নির্ভরযোগ্যভাবে আপনার অর্থ বিনিয়োগ করতে পারবেন।
আপনি যদি বিনিয়োগে নতুন হন বা আপনার সঞ্চিত অর্থ বিনিয়োগ করে সর্বাধিক মুনাফা উপার্জন করায় আগ্রহী হয়ে থাকেন তবে স্টকে বিনিয়োগের পূর্বে কিছু বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানা ও বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
১। আপনার সঞ্চিত অর্থ বিনিয়োগের জন্য স্টক একাধিক বিকল্পের মধ্যে একটি
স্টক একটি জনপ্রিয় ও লাভজনক বিনিয়োগ প্রকল্প হলেও, এটি বিনিয়োগের একমাত্র উপায় নয়। আপনার চাহিদা, আয়ের উৎস, কাঙ্খিত মুনাফা, অর্থ উত্তোলনের উপযুক্ত সময় ইত্যাদির উপর নির্ভর করে আপনি বিভিন্ন বিনিয়োগ কৌশল ও প্রকল্প অবলম্বন করতে পারেন। এসকল প্রকল্পের মধ্যে সঞ্চয় হিসাবে অর্থ জমা রাখা, বন্ড ক্রয়, রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ, স্থায়ী সম্পদ, মুল্যবান ধাতু এবং বৈদেশিক মুদ্রায় বিনিয়োগ ইত্যাদি অন্যতম। যেহেতু কোন বিনিয়োগই ঝুঁকি-মুক্ত নয়, উপরোক্ত সবগুলো বিনিয়োগ প্রকল্পই বিভিন্ন মাত্রার ঝুঁকি ও মুনুফার সাথে জড়িত।
২। স্টকে বিনিয়োগ (বিশেষত স্বল্পমেয়াদে) একটি উচ্চমাত্রার ঝুঁকি সংবলিত বিনিয়োগ
স্টকে বিনিয়োগকে দীর্ঘমেয়াদে একটি নির্ভরযোগ্য বিনিয়োগ প্রকল্প হিসেবে গণনা করা হলেও অভিজ্ঞ বিশ্লেষকরা এবিষয়ে কোন নিশ্চয়তা দিতে পারেন না। শেয়ার বাজার, বিশেষ করে স্বল্পমেয়াদে, অত্যন্ত অস্থিতিশীল এবং নিয়মিত সূচকের নিম্নমূখীতা ও ঊর্ধ্বমূখীতায় ওঠা-নামা করতে দেখা যায়। যদি আপনি স্বল্পমেয়াদে আপনার সঞ্চিত অর্থ বিনিয়োগ করতে চান, তবে স্টকের তুলনায় অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য ও কম ঝুঁকির বেশকিছু বিনিয়োগ প্রকল্প রয়েছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৪- ২০১৭ সালে বাংলাদেশের শেয়ার বাজারের গড় মার্কেট রিটার্ন ছিল ১০.৩৯%। তবে প্রতি বছর শেয়ার বাজারের এই পরিসংখ্যানগুলোতে ব্যাপক ওঠা-নামা লক্ষ্য করা যায়। এমনকি দীর্ঘমেয়াদে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ হতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ মুনাফার নিশ্চয়তা দেয়া যায় না। তাই স্টকে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে এবং মনে রাখতে হবে যে শেয়ার বাজারে কোন কিছুই নিশ্চিত নয়।
৩। অধিকাংশ মানুষ স্টকে বিনিয়োগের জন্য ব্রোকারেজ ফার্মে অ্যাকাউন্ট খুলে থাকেন যা বর্তমানে ব্রোকারেজ ফার্মগুলোর অনলাইন সেবা ব্যবহার করে করা যায়
বিনিয়োগকারীরা সাধারণত একটি ব্রোকারেজ ফার্মের মাধ্যমে স্টকে বিনিয়োগ করেন। ব্রোকারেজ ফার্মগুলো সাধারণত এরূপ সার্ভিসের জন্য স্বল্প পরিমাণে ফি চার্জ করে থাকে। বর্তমানে, শেয়ার বাজারের অনিশ্চয়তা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার উদ্দেশ্যে ট্রেডিং কার্যক্রম ও নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা মোবাইল ডিভাইসের সাহায্যে করার জন্য বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হচ্ছে। রয়্যাল ক্যাপিটাল লিমিটেড এমনই একটি শীর্ষস্থানীয় অনলাইন সেবা প্রদানকারী ব্রোকারেজ ফার্ম যা ১৯৯৬ সাল থেকে ক্লায়েন্টদের যথাযথ সেবা দিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে এটি DSE এবং CSE উভয় প্ল্যাটফরম হতেই তার ক্লায়েন্টদের সর্বোত্তম সেবা প্রদানে কর্মরত। এদের নিজস্ব মোবাইল আপ্লিকেশন রয়েছে যা “রয়্যাল টাচ” নামে পরিচিত। এর সাহায্যে ক্লায়েন্টরা নিজেদের পোর্টফলিও ও লেজারের ব্যালেন্স ব্যবস্থাপনা হতে শুরু করে আইপিওতে আবেদন করা পর্যন্ত যাবতীয় কার্যক্রম অনলাইনে করতে পারবেন।
৪। বিভিন্ন ব্রোকারেজ ফার্মের সম্ভবপরতা ও দুর্বলতা বিভিন্ন রকম
সকল ব্রোকারেজ ফার্মের মূল উদ্দেশ্য এক হলেও এদের সেবার মান ও পরিচালন ব্যবস্থা এক নয়। আপনার বিনিয়োগ চাহিদার উপর নির্ভর করে আপনি বিভিন্ন ব্রোকারেজ ফার্মের সাহায্যে বিনিয়োগ করতে পারেন। কোন ব্রোকারেজ ফার্মটি আপনার জন্য সঠিক তা আপনার বিনিয়োগ লক্ষ্য এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আপনার কতখানি সহায়তা প্রয়োজন তার উপর নির্ভর করবে। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোন একটি ব্রোকারেজ ফার্ম সকল চাহিদা পূরণ করতে পারে না। তাই কোন ব্রোকারেজ ফার্মটি আপনাকে সর্বোত্তম সেবা প্রদান করবে তা জানার জন্য যথাযথ অনুসন্ধান করুন।
৫। কোন একটি কোম্পানির শেয়ারে আপনার সম্পূর্ণ অর্থ বিনিয়োগ করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ
আপনার মতে পরবর্তী অ্যাপেল বা আমাজন হওয়ার ক্ষমতা রাখে এমন একটি সম্ভাবনাময় নতুন কোম্পানিতে আপনার সম্পূর্ণ অর্থ বিনিয়োগ করা আপাতদৃষ্টিতে অত্যন্ত লোভনীয় মনে হতে পারে। তবে বাস্তবে, কোন একটি কোম্পানিতে সম্পূর্ণ অর্থ বিনিয়োগ করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কোন কোম্পানিটি রাতারাতি সাফল্য পাবে আর কোনটি ক্ষতির সম্মুখীন হবে তা আগে থেকে নিশ্চয়তার সাথে অনুমান করা যায় না। আপনি যদি একটি ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন তবে আপনি আপনার বিনিয়োগের একটি অংশ বা এক্ষেত্রে বিনিয়োগের সম্পূর্ণ অর্থ হারাতে পারেন।
৬। ঝুঁকি হ্রাসের একটি অন্যতম কৌশল হল একাধিক খাতে বিনিয়োগ করা
বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একটি বহুল ব্যবহৃত কৌশল হল ঝুঁকি কমানোর জন্য একাধিক কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা। এটি মোট ঝুঁকির পরিমাণ একাধিক খাতের মধ্যে বণ্টন করে এবং কোনো একটি কোম্পানির ক্ষতির ফলে সম্পূর্ণ অর্থ হারানো থেকে আপনাকে রক্ষা করে। তবে এর জন্য ব্রোকারেজ ফার্মগুলো প্রায়শই অতিরিক্ত ফি চার্জ করে থাকে যার ফলে দীর্ঘমেয়াদে আপনার আয়ের হার হ্রাস পেতে পারে।
৭। অধিকাংশ স্টকই লভাংশ প্রদান করে যা আপনাকে শেয়ার বিক্রয় ছাড়াই একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ আয়ের নিশ্চয়তা দেয়
লভ্যাংশ হল এমন একটি আয় যা কোন কোম্পানি তার শেয়ারহোল্ডারদের তাদের ক্রয়কৃত শেয়ারের প্রেক্ষিতে দিয়ে থাকে এবং এটি সাধারণত ত্রৈমাসিক হারে বণ্টন করা হয়। সাধারণত কোন কোম্পানির শেয়ারের মালিক হলেই লভ্যাংশ দাবি করা যায়। লভ্যাংশ মূলত আপনার বিনিয়োগের একটি ছোট অংশকে নির্দেশ করে। তবে যদি আপনি শেয়ার বাজারে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে থাকেন তবে লভ্যাংশ আপনার আয়ের সব থেকে বড় উৎস হয়ে উঠতে পারে। কোম্পানিগুলো তাদের আর্থিক অবস্থার উপর নির্ভর করে লভ্যাংশের হার বাড়াতে, কমাতে বা বাদ দিতে পারে।
৮। মিউচুয়াল ফান্ড স্টক ও অন্যান্য বিনিয়োগ খাতের সমন্বয়ে তৈরি একটি পোর্টফলিও
মিউচুয়াল ফান্ড বলতে একধিক বিনিয়োগ খাতের সমন্বয়ে তৈরি একটি ফান্ডকে বোঝায়ে। এই ফান্ডটি সম্পূর্ণরূপে বিভিন্ন রকম স্টক দ্বারা গঠিত হতে পারে আবার বিভিন্ন বিনিয়োগ খাত যেমন বন্ড, স্থায়ী সম্পদ, বৈদেশিক মুদ্রা ইত্যাদির সমন্বয়ে গঠিত হতে পারে। মিউচুয়াল ফান্ড সাধারণত ফান্ডটির রক্ষনাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য একটি নির্দিষ্ট ফি চার্জ করে। একটি মিউচুয়াল ফান্ড কীভাবে বিনিয়োগ কার্যক্রম সম্পাদন করে এবং এটি কীভাবে পরিচালিত হয় তা কোম্পানি অনুযায়ী ভিন্ন হয়ে থাকে। তাই যেকোনো মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের আগে কোম্পানিটি এবং তার প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।
৯। যদি আপনি অবসরের কথা ভেবে বিনিয়োগ এ আগ্রহী হন তবে কর–বাদযোগ্য খাতে বিনিয়োগ একটি আকর্ষণীয় বিকল্প
আপনি যদি অবসর গ্রহণের উদ্দেশ্যে অর্থ সঞ্চয় করতে চান তবে কর সুবিধাযুক্ত অবসর অ্যাকাউন্টগুলি আপনার জন্য আকর্ষণীয় এবং লাভজনক বিকল্প হতে পারে। এর মধ্যে আইআরএ (IRA), প্রভিডেন্ট ফান্ড ও অন্যান্য অবসর পরবর্তী সঞ্চয় হিসাব ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই অ্যাকাউন্টগুলি কর-বাদযোগ্য, অর্থাৎ আপনি অবসরের সময় আপনার সঞ্চিত অর্থ উত্তলন করা না পর্যন্ত আপনার অর্থের উপর কোন আয়কর দিতে হবে না।
১০। স্টকের উপর ধার্যকৃত করের পরিমাণ যতটা ভীতিকর মনে হয় ততটা না
বিনিয়োগ প্রসঙ্গে বেশিরভাগ মানুষই কর নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রকাশ করেন। তবে কর নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার তেমন কোন যৌক্তিকতা নেই। যখন আপনি কর সুবিধাযুক্ত অবসর অ্যাকাউন্টগুলিতে বিনিয়োগ করবেন তখন আপনি নিয়মিত আয়কর পরিশোধ করবেন। তবে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য একজন অভিজ্ঞ কর বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করুন।
erfanuap
September 4, 2021thanks for the information
admin
September 19, 2021You are always welcome sir