37°C°F Precipitation: 0% Humidity: 44% Wind: 10 km/h
Friday 13th September 2024
বিনিয়োগ কেনো করবেন – Why invest
By admin

বিনিয়োগ কেনো করবেন – Why invest

ওয়ারেন বাফেট বা কার্ল ইক্যান থেকে শুরু করে ভারতের রাধাকিশান দামানী পর্যন্ত পৃথিবীর শীর্ষ ১০০ জন ধনকুবের বেশ অনেক জন ই আছেন যারা শুধু মাত্র বিনিয়োগ করে বিলিয়নার বনে গেছেন। টাকা গচ্ছিত রাখা নাকি বিনিয়োগ করা, কোন টা বুদ্ধিমানের কাজ এ নিয়ে তর্ক বিতর্ক নতুন নয়।

buffet quote - why invest

গ্রীক দার্শনিক এরিষ্টটল আড়াই হাজার বছর আগে শিষ্যদের পরামর্শ দিয়ে গেছেন “অর্ধেক খাও আর অর্ধেক সঞ্চয় করো”। সময়ের প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের সাথে সাথে বাস্তবতার নিরীখে জীবন ধারনের জন্য সঞ্চয় এর সাথে “বিনিয়োগ” শব্দটিও জড়িয়ে গেছে।

বর্তমান দুর্মূল্যের বাজারে মাসিক খরচ মিটিয়ে,  বাকী অর্ধেক সঞ্চয় বা বিনিয়োগ কল্পনাই বৈকি। তারপরও ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করেন এমন ব্যাক্তিরা যতটুকু সম্ভব কেনো বিনিয়োগ করেন? বিনিয়োগ কি আদৌ আপনার দুশ্চিন্তামুক্ত ভবিষ্যত দিতে পারে? কিংবা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ কি আদৌ লাভজনক? এসবকিছু জানতে হলে পড়তে হবে পুরো টা।

কেনো বিনিয়োগ গুরুত্বপূর্ণ

ধরুন, মূলধন হিসেবে আপনার কাছে কিছু ধান গাছের বীজ রয়েছে। আপনি এর মধ্যে অর্ধেক আপনার কাছে রেখে দিলেন সঞ্চয় হিসেবে। বাকী অর্ধেক বীজ বপন এর সিদ্ধান্ত নিলেন। কিছু দিন সময় আর শ্রম দেয়ার পর মৌসুম শেষে আপনি সেখান থেকে বেশ কিছু শস্য পেলেন। সেটি বিক্রি করে আপনি বেশ লাভবান ও হলেন।

যে টুকু বীজ আপনি সঞ্চয় হিসেবে রেখেছিলেন সেটা মৌসুম ঘুরে ততোটুকুতেই স্থির থাকলো। অপরদিকে আপনার বাকী অর্ধেক আপনি বিনিয়োগ করলেন যেটাতে আপনার মূলধন প্রকৃতই বৃদ্ধি পেলো।

কথায় বলে, টাকায় টাকা আনে। হাতে যথেষ্ট টাকা থাকলে সেটা খাটানোই শ্রেয়। বালিশের নিচে টাকা নিয়ে ঘুমুলে সে টাকা বাড়ে না। যদিও টাকা আপনার, সিদ্ধান্তও আপনার।  টাকার মালিক আপনি যেভাবেই হয়ে থাকেন না কেনো সেটা  নদীতে ভাসিয়ে দেয়া বিবেচকের কাজ নয়।

যদি আর্থিকভাবে সুরক্ষার কথা ভাবেন, জরুরী অবস্থায় নিজের পরিবার কে প্রস্তত রাখতে চান তবে বিনিয়োগের বিকল্প নেই। ধনী হওয়ার অর্থ এই নয় যে আপনি কতো বেশী উপার্জন করেন বরং আপনি কতো বেশী বিনিয়োগ এর সক্ষমতা রাখেন সেটিকে বুঝায়।

বিনিয়োগ এর মাধ্যমে আপনি শুধু লভ্যাংশ পাচ্ছেন তাই না বরং একই সাথে আপনার মূল অর্থও সঞ্চয় হচ্ছে। আর্থিক নিরাপত্তাহীনতার সবচেয়ে সুবিবেচক সমাধান হতে পারে বিনিয়োগ।

কোথায় বিনিয়োগ করবেন

যেকোনো ব্যাংকের স্থায়ী আমানত (এফ ডি আর)  হিসেবে টাকা গচ্ছিত রাখলে সুদ দেয়। সরকার যেহেতু এটার নিশ্চয়তা প্রদান করে সেহেতু অনেকেই এটাকে বিনিয়োগের সহজতর উপায় হিসেবে বেছে নেন। ডাকঘরে টাকা গচ্ছিত করলেও বেশ ভালো সুদ দেয়। তবে আজকাল কোনো ব্যাংক দীর্ঘ মেয়াদী এফ ডি আর এ উৎসাহী না। যার কারনে এতে বিনিয়োগের উৎসাহ এখন অনেকটাই হারিয়েছে সাধারণ মানুষ।

বীমা কোম্পানী তে টাকা খাটালে নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর বোনাস পাওয়া যায় আবার একটা সময় শেষে আপনার খাটানো অর্থও বৃদ্ধিও পায়। এছাড়াও বিভিন্ন মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন।

তবে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত,অধিক লাভজনক এবং সর্ববৃহৎ বিনিয়োগ ক্ষেত্র হলো পুঁজিবাজার বা শেয়ার মার্কেট। যদিও এই ক্ষেত্র টি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ, তবুও শেয়ার বাজার হলো দীর্ঘমেয়াদে অর্থ বিনিয়োগের সর্বোৎকৃষ্ট উপায়।

শেয়ার বাজারে কেনো বিনিয়োগ করবেন

বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত বিনিয়োগকারী ওয়ারেন বাফেটের একটা বিখ্যাত উক্তি রয়েছে, ” শেয়ার বাজার হোলো অসিহষ্ণুতা থেকে সহিষ্ণু হবার একটি পক্রিয়া”

আপনি যদি দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগে আগ্রহী হোন তবে যথেষ্ট বিচক্ষণতা, জ্ঞান আর ধৈর্য দিয়ে আপনার মূলধন এর সর্বোচ্চ উপযোগীতা তৈরী করতে পারেন শেয়ার বাজারে। সাধারনত,শেয়ারবাজারের চেয়ে আর কোনো বিনিয়োগ ক্ষেত্রে থেকে বেশী লভ্যাংশ পাওয়া সম্ভব না।  আপনি যদি শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করার আরো কিছু কারণ খুঁজতে চান তবে আমরা আপনাকে উপযুক্ত কারণ প্রদর্শন করবো।

দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ ক্ষেত্র

সঞ্চয়পত্রের সুদ, বন্ড, ডাকঘর এ জমা টাকা বা ব্যাংকের এফ ডি আর কোথাও দীর্ঘমেয়াদী টাকা খাটানো আর আগের মতো সহজ নয়। ব্যাংক গুলো দীর্ঘমেয়াদী এফ ডি আর এ জনসাধারণ কে অনুৎসাহিত করছে। এক্ষেত্রে শেয়ার বাজার দিতে পারে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের নিশ্চয়তা। যদিও স্বল্পমেয়াদী ও অতি উৎসাহী বিনিয়োগকারীদের জন্য পুঁজিবাজার মোটেও উৎকৃষ্ট ক্ষেত্র নয়।

অধিকা মুনাফার সম্ভাবনা

শেয়ার বাজারের ঝুকিপূর্ণ এটা যেমন সত্য তেমনি অন্যান্য বিনিয়োগ ক্ষেত্র থেকে এটার ব্যাপ্তি আর মুনাফা আয়ের সম্ভাবনাও বেশী। ঝুঁকি আপনাকে নিতেই হবে কিছুটা যদি অধিক লাভের চিন্তা করেন। তবুও একটা কথা থেকেই যায়। সেটা তখনই ঝুঁকিতে রূপান্তর হয় যখন আসলে আপনি জানেন না যে আপনি কি করছেন। পুঁজিবাজারে সফল হতে হলে বিচক্ষণতা আর জ্ঞান এর বিকল্প নেই। সঠিক জ্ঞান আর কৌশল প্রয়োগে আপনার শেয়ার থেকে কয়েক গুন আয় সম্ভব।

টাকা বাকী নাই

বিনিয়োগ বা ব্যাবসা এমন খুব কমই আছে এমন যেখানে “টাকা বাকী” এই কথা শুনতে হয় না। কিন্ত পুঁজিবাজার এ সবকিছুই নগদ অর্থের কারবার। শেয়ার ক্রয় অথবা বিক্রয় সেটা কম দামে হোক বা বেশী দামে, সেটা সব সময় নগদ অর্থে সম্পন্ন হয়।

বৈচিত্রতা

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের আরেকটি অন্তর্নিহিত মন্ত্র হোলো বৈচিত্রতা। ঋণ জামানত থেকে শুরু করে, কমন শেয়ার, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, অগ্রাধিকার মুচলেকা, লার্জ-ক্যাপ শেয়ার, মিড-ক্যাপ শেয়ার সহ বিভিন্ন রকমের শেয়ারে টাকা খাটানোর সুযোগ রয়েছে। আপনি চাইলে কয়েক প্রকারের শেয়ার ক্রয় করে আপনার ঝুঁকি কমাতে পারেন।

ফলশ্রুতিতে, যদিও বা কোনো একটি কোম্পানীর শেয়ার এর মূল্য হঠাৎ হ্রাস পায়, অন্যান্য কোম্পানীর শেয়ার গুলো আপনার দেউলিয়া হবার ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। একই সাথে এক ক্ষেত্রে লোকসান এর সম্মুখীন হলেও অন্যান্য ক্ষেত্র গুলো আপনার মূলধন সমতায় সাহায্য করে।

সহজবোধ্য এবং নমনীয়

শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ ব্যাবস্থা মোটেও দুর্বোধ্য কিছু নয়। অনেকেই শেয়ার বাজারের নাম শুনলে জটিল অংকের হিসাব আর ঝুঁকি কেই বুঝে থাকেন। কিন্ত প্রকৃতপক্ষে, আপনি যদি ধীরস্থির হন, কিছুটা ধৈর্য ধরে থাকতে পারেন আর অতি দ্রুত লভ্যাংশ প্রাপ্তির লোভ আপনাকে না তাড়া করে তবে শেয়ার বাজার আপনার কাছে অতি সহজেই ধরা দিতে পারে। আপনার যেটা প্রয়োজন সেটা হলো গবেষনা বা অনুসন্ধান। আপনি চাইলে এক্সপার্ট এর পরামর্শ ও পেতে পারেন।

একই সাথে এখানে টাকা খাটানোর জন্য আপনাকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না। বছরের যে কোনো সময় সুযোগ বুঝে চাইলেই আপনি আপনার সঞ্চিত অর্থ বিনিয়োগ করতে পারেন। আবার শেয়ার বাজার মানেই আপনাকে কড়ি কড়ি টাকা ইনভেস্ট করতে হবে তাও নয়। আপনি চাইলে একটা শেয়ার ক্রয় করতে পারেন আবার চাইলে বিভিন্ন কোম্পানির একশো টা শেয়ারও ক্রয় কর‍তে পারেন।

মুদ্রাস্ফীতি এর বিপরীতে সেরা বাজি

মুদ্রাস্ফীতি হচ্ছে সাধারণ উপলব্ধ অর্থের পরিপ্রেক্ষিতে সময়ের সাথে সাথে মূল্য বৃদ্ধি। মুদ্রাস্ফীতির ফলে মানুষের  ক্র‍য় ক্ষমতা কমে, যেখানে কোনো পন্যের আসল বিক্রয় মুল্যও নেমে যায়। একটা পন্যের ক্রয় মূল্য এক বছরে ১০০ টাকা থাকলে পরের বছর মুদ্রাস্ফীতির দরুন ১২০ হতে পারে অথচ বিক্রয় মূল্য আরো অনেক কম থাকতে পারে।

অন্যান্য বিনিয়োগে মুদ্রাস্ফীতির কারনে সৃষ্ট অবস্থা দারুণ প্রভাব ফেলে। ব্যাংক এর এফ ডি আর বা সঞ্চয়পত্রে সুদের হারে এর ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। অন্যদিকে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগে এই ঝুঁকি অনেকটাই কম। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ দীর্ঘমেয়াদী হওয়ায় চাইলেই আপনি এই সাময়িক মুদ্রাস্ফীতির ক্ষতিকর প্রভাব এড়াতে পারেন।

শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ ঝুঁকি কমানোর উপায়

আপনার টাকা আছে, যথেষ্ট সঞ্চয় রয়েছে, আপনি বিনিয়োগে আগ্রহ, শেয়ার বাজারে বিনিয়োগে যে যথেষ্ট লাভবান হওয়া যায় তাও বুঝেছেন। তারপর ও আপনার জানা উচিৎ শেয়ার বাজার যথেষ্ট ঝুকিপূর্ণ এবং যদি না আপনার এ সম্পর্কে সম্মক জ্ঞান থাকে তবে আপনি মুহুর্তে দেউলিয়া হয়ে যেতে পারেন। শেয়ার বাজারে ঝুঁকি কি এড়াতে এ ব্যাপারগুলো মাথায়া রাখা জরুরী!

১. কখনো ধার করে বিনিয়োগ করবেন না

শেয়ার বাজারে কোনো কম্পানীর শেয়ার মূল্য দেখে যদি মনে হয় বেশ লাভবান হবেন, আপনার ব্যাংক থেকে লোন করে হোলেও শেয়ার কেনা উচিৎ তবে আপনি নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারার প্রথম ধাপ সম্পন্ন করলেন। শেয়ার বাজারে নিশ্চিত বলে কোনো শব্দ নেই। তাই ধার করা অর্থে শেয়ার ক্রয় করে দেউলইয়ার পথ সুগম করবেন না।

২. ভালো শেয়ার কম দামে কিনুন

ভালো কোম্পানী অর্থ এই নয় যে সেটি ভালো শেয়ার। ওয়ারেন বাফেট এর সূত্র অনুযায়ী এ কোম্পানী শেরহোল্ডার কে ভালো ডিভিডেন্ট দিয়েছে, যথেষ্ট সুনাম আছে সেরকম কোম্পানী থেকে কম দামে শেয়ার কেনার চেষ্টা করুন।

৩. পুরো সঞ্চয় দিয়ে শেয়ার কিনবেন না

আপনার হাতে ১০ লক্ষ টাকা সঞ্চয় আছে। শেয়ার বাজারের সফল হতে চাইলে কখনোই পুরো সঞ্চয় খরচ করে শেয়ার কিনবেন না। কিছু অর্থ সবসময় নিজের কাছে রেখে দিবেন। এক্ষেত্রে কোনো কারনে শেয়ারে দরপতন হয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হোলেও সেটা যাতে পরবর্তীতে পুষিয়ে নিতে পারেন।

৪. ভিন্ন ভিন্ন কোম্পানীর শেয়ার কিনুন

কখনোই এক কোম্পানী থেকে সব গুলো শেয়ার কিনবেন না। এর চেয়ে বড় ঝুঁকি শেয়ার বাজারে আর দ্বিতীয় টি নেই। কোনো কারনে কোম্পানির শেয়ার এর দর পতন হলে আপনার পুরো বিনিয়োগ কৃত অর্থ অনিশ্চয়তায় পরে যাবে। তার চেয়ে বিভিন্ন কোম্পানী থেকে শেয়ার কিনুন। একটি শেয়ারের দরপতন হলেও বাকীগুলো আপনাকে রক্ষা করবে।

৫. কোম্পানী নিয়ে অনুসন্ধান করুন

অর্থনীতিতে ভালো কোম্পানী আর শেয়ার বাজারের ভাষায় ভালো কোম্পানীর মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। ভালো কোম্পানী আর ভালো শেয়ার এর মধ্যেও অনেক তফাৎ। বিনিয়োগের আগে আপনাকে অনুসন্ধান করে খুঁজে বের করতে হবে কোন কোম্পানীর শেয়ার প্রচুর বেচা কেনা হয়, কোন টি বিগত বছরে সফল, শেয়ারহোল্ডার দের সুযোগ সুবিধা কোন কোম্পানী বেশী দেয়। এতে আপনার ঝুঁকি কমবে।

শেষ কথা

টাকায় টাকা আনে এটা যেমন সত্য তেমনি আপনি যদি না জানেন ঠিক কোন জায়গায় টাকা খাটালে আপনার টাকা থেকে মুনাফা আপনার পকেটে উঠবে তবে ভাগ্যকুল আপনার বিপরীতে আংগুল দেখাতেই পারে।  শেয়ারবাজার আপনার বিনিয়োগ শুধু টাকা নয়, ধৈর্যও আরেকটি বড় বিনিয়োগ।  বিচক্ষণতা, সঠিক রিসার্স আর সময়ের সাথে সাথে শেয়ার বাজারে ঝুঁকি কমানোর কিছু কৌশল রপ্ত করে থাকলে আপনিই হয়তোবা হতে চলেছেন এ যুগের পরবর্তী ওয়ারেন বাফেট।

  • No Comments
  • August 5, 2021

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *