ইক্যুইটির ব্যয় নির্ণয়ে সিএপিএম (CAPM) এর ব্যবহার
মূলধন বাজেটিং এর ক্ষেত্রে হিসারক্ষক ও আর্থিক বিশ্লেষকগণ প্রায়শই শেয়ারহোল্ডারদের ইক্যুইটির মূল্য নির্ধারণের জন্য ক্যাপিটাল এসেট প্রাইজিং মডেল (CAPM) ব্যবহার করে থাকেন। এটি নিয়মিত ঝুঁকি এবং প্রত্যাশিত আয়ের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ককে মূল্যায়ন করে। সিএপিএম (CAPM) সাধারণত ঝুঁকিপূর্ণ সিকিউরিটিগুলোর মূল্য নির্ধারণ, সম্পদের সাথে প্রদত্ত ঝুঁকির প্রত্যাশিত আয়ের পরিমাণ নির্ণয়, মূলধন ব্যয় নির্ণয় ইত্যাদিতে ব্যবহার করা হয়।
সিএপিএম (CAPM) এর সাহায্যে ইক্যুইটির ব্যয় নির্ণয়
সিএপিএম (CAPM) সূত্রের সাহায্যে ইক্যুইটির ব্যয় নির্ণয়ে কেবলমাত্র নিম্নলিখিত তথ্যগুলো প্রয়োজনঃ
- বাজারে বিদ্যমান আয়ের হার (market rate of return)
- সংশ্লিষ্ট শেয়ারের বেটা ভ্যালু (beta)
- ঝুঁকিমুক্ত আয়ের হার (risk-free return)
এখানে,
Ra = ইক্যুইটির ব্যয়
Rr f = ঝুঁকিমুক্ত আয়ের হার
Ba = বেটা
Rm = বাজারে বিদ্যমান আয়ের হার
বাজারে বিদ্যমান আয়ের হার বলতে শেয়ার বাজারে উৎপন্ন আয়কে বোঝানো হয়ে যেখানে কোম্পানির শেয়ার লেনদেন করা হয়। যদি কোনো একটি কোম্পানি অন্য একটি কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে যার আয়ের হার ১২%, তবে এই আয়ের হারই সিএপিএম (CAPM) ফর্মুলায়ে প্রথমোক্ত কোম্পানিটির ইক্যুইটি ব্যয় নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হবে।
শেয়ারের বেটা ভ্যালু বলতে সামগ্রিক বাজারের সাপেক্ষে একটি নির্দিষ্ট সিকিউরিটির ঝুঁকির পরিমাণকে বোঝায়। বেটা ভ্যালুর মান ১ হওয়ার অর্থ হল শেয়ারটি বাজার ঝুঁকির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে। কোন একটি কোম্পানি যদি ৫% মুনাফা লাভ করে তবে কোম্পানিটির শেয়ারের ভ্যালুও বৃদ্ধি পায়। বেটার মান বেশি হলে তা ঝুঁকির সাপেক্ষে একটি পরিবর্তনশীল শেয়ার কে নির্দেশ করে আবার বেটার কম হলে তা একটি স্থিতিশীল শেয়ার কে নির্দেশ করে।
ঝুঁকিমুক্ত হার বলতে সাধারণত স্বল্পমেয়াদী সরকারি ট্রেজারি বিলকে বোঝানো হয় কারণ ঝুঁকির দিক থেকে এই সিকিউরিটিগুলো খুবই স্থিতিশীল এবং সরকারকর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। অর্থাৎ, এতে বিনিয়োগকৃত মূলধন হারানোর ঝুঁকি প্রকৃতপক্ষে শূন্য এবং এটি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ মুনাফা লাভ করার নিশ্চয়তা দিয়ে থাকে।
বর্তমানে সিএপিএম (CAPM) এর সাহায্যে ইক্যুইটির ব্যয় নির্ণয়ের জন্য একাধিক অনলাইন এপ্লিকেশন রয়েছে, তবে হাতে-কলমে গণনা করা বা মাইক্রোসফট এক্সেল এর সাহায্যে ফর্মুলা বা সূত্র ব্যবহার করে নির্ণয় করা তুলনামূলকভাবে সহজ।
মনে করি, কোনো একটি কোম্পানি অন্য একটি কোম্পানিতে ৯% আয়ের হারে বিনিয়োগ করে। বাজারের তুলনায় কোম্পানিটির শেয়ার তুলনামূলক পরিবর্তনশীল এবং বেটার মান ১.২। তিন মাস মেয়াদী ট্রেজারি বিল অনুযায়ী ঝুঁকিমুক্ত আয়ের হার ৪.৫%। এই তথ্যাদির ভিত্তিতে কোম্পানিটির ইক্যুইটি ব্যয়ের পরিমাণ নিম্নরূপ –
৪.৫ + ১.২ * (৯ – ৪.৫) = ৯.৯%
ইক্যুইটির ব্যয় হল ভারযুক্ত গড় মূলধন ব্যয়ের (WACC) একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। সাধারণত এটি একাধিক আর্থিক পরিকল্পনা বা পোর্টফলিও এর মোট প্রত্যাশিত ব্যয়ের পরিমাণ নির্ণয় এবং এসকল পোর্টফলিও এর মধ্য থেকে সবথেকে সাশ্রয়ী পোর্টফলিওটি নির্বাচন করতে সাহায্য করে।
অধিকাংশ হিসাবরক্ষক ও আর্থিক বিশ্লেষকের মতে, সিএপিএম (CAPM) শেয়ারহোল্ডারদের ইক্যুইটি ব্যয় নির্ণয়ের জন্য একটি কার্যকরী পদ্ধতি। এটি নিয়মিত ঝুঁকি ও সম্পদের প্রত্যাশিত আয়ের মধ্যকার সম্পর্ককে মূল্যায়ন করে এবং একাধিক হিসাবরক্ষণ ও অর্থায়ন সম্পর্কিত প্রসঙ্গে ব্যবহার করা হয়।