
ট্রেন্ড সম্পর্কিত প্রাথমিক ধারণা : টেকনিকাল এনালাইসিস পর্ব ২
একটি কোম্পানির শেয়ারের মূল্যের অগ্রসরের দিককেই ট্রেন্ড বলা হয়।টেকনিক্যাল এনালাইসিসে ট্রেন্ড খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। টেকনিক্যাল এনালিস্ট যেসব টুল ব্যবহার করেন যেমন, সাপোর্ট রেজিসটেন্স লেভেল, প্রাইস প্যাটার্ন, মুভিং এভারেজ, ট্রেন্ডলাইন সবকিছুরই মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মার্কেটের ট্রেন্ড বুঝতে পারা। আমরা প্রায় সময় কিছু কথা শুনে থাকি যেমন, “সব সময় ট্রেন্ডের সাথে ট্রেড করা উচিত” বা “Trend is your friend”। অধিকাংশ ট্রেডারই ট্রেন্ডের সাথে ট্রেড করতে পছন্দ করেন। তারা ট্রেডিং এর জন্যে ট্রেন্ড ফলোইং ট্রেডিং স্ট্রাটেজি সাজিয়ে থাকেন। অপরদিকে অনেক ট্রেডার ট্রেন্ড এর বিপরীতেও ট্রেড করে থাকেন।
ট্রেন্ড সাধারণত ট্রেন্ড লাইন দিয়ে চিহ্নিত করা হয়। এছাড়াও প্রাইস এর আপট্রেন্ডে হায়ার সুইং হাই(Higher Swing High) & হায়ার সুইং লো (Higher Swing Low) এবং ডাউনট্রেন্ডে লোয়ার সুইং হাই ( Lower Swing High) & লোয়ার সুইং লো (Lower Swing Low) এনালাইসিস করে চিহ্নিত করা যায়।
প্রাইজ সাধারনত সোজা উপরে উঠে যায় না বা সোজা নিচে নেমে যায় না বরং ওয়েভ/ঢেউয়ের মতো হায়ার হাই (Higher High) & হায়ার লো (Higher low) তৈরি করতে করতে উপরে উঠে ও লোয়ার হাই (Lower High) & লোয়ার লো (Lower Low) তৈরি করতে করতে নিচে নামে।
আপ ট্রেন্ড
কোনো কোম্পানির শেয়ারের দাম যখন সার্বিকভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে তখন তাকে আপট্রেন্ড বলা হয়।আপ ট্রেন্ড দিয়ে বুঝায় যেকোনো একটি ফিনান্সিয়াল অ্যাসেট এর সার্বিক গতিবিধি ঊর্ধ্বমুখী।
ডাউনট্রেন্ড
বিপরীতভাবে কোনো কোম্পানীর শেয়ার যখন সার্বিকভাবে কমতে থাকে তখন তাকে ডাউনট্রেন্ড বলা হয়।
সুইং হাই (Swing High)
টেকনিক্যাল এনালাইসিস এ সুইং হাই শব্দটি অনেক ব্যবহৃত হয়। আপট্রেন্ডে প্রাইস উপরে উঠার সময় সর্বোচ্চ যে পর্যন্ত প্রাইজ উপরে উঠে এরপর নামা শুরু করে ঐ সর্বোচ্চ প্রাইস পয়েন্টকে সুইং হাই বলা।
হায়ার সুইং হাই (Higher Swing High)
নতুন একটি সুইং হাই যখন তার পূর্ববর্তী সর্বোচ্চ সুইং হাইকে ভেঙে ফেলে তখন তাকে হায়ার সুইং হাই হয় বলা হয়।
প্রাইজ আপট্রেন্ডে ক্রমাগত হায়ার সুইং হাই(Higher Swing High) এবং হায়ার সুইং লো(Higher Swing Low) তৈরি করতে থাকে। যতক্ষণ পর্যন্ত মার্কেট ক্রমাগত হায়ার সুইং হাই ও হায়ার সুইং লো তৈরি করে যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত আপট্রেন্ড চলমান রয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়।
কিন্তু প্রাইস যখন লোয়ার সুইং হাই (Lower Swing High) এবং লোয়ার সুইং লো (Lower Swing Low) তৈরি করা শুরু করে তখন আপট্রেন্ড শেষ হয়েছে বা নতুন ডাউনট্রেন্ড শুরু হয়েছে বলে বিবেচিত হয়।
হাই-লো এনালাইসিস করে যেভাবে ট্রেন্ড চিহ্নিত করা যায়:
অভিজ্ঞ ট্রেডাররা প্রাইজের হাই(High) এবং লো(Low) এনালাইসিস করে ট্রেন্ড চিহ্নিত করেন। নতুন ট্রেডাররা অনেক সময় ট্রেন্ড চিহ্নিত করতে বিভিন্ন ইন্ডিকেটর (Indicator) এর সহায়তা নিয়ে থাকেন।
উপরের চিত্রে প্রত্যেকটির নীল রং এর বক্সগুলো হায়ার সুইং হাই নির্দেশ করে। এখানের প্রত্যেকটি বক্স তার পূর্ববর্তী বক্সের থেকে উঁচুতে অবস্থিত।একই সাথে ছবির লাল রং এর বক্সগুলো বক্সগুলো হায়ার সুইং লো নির্দেশ করে। এখানে প্রত্যেকটি সুইং লো তার পূর্ববর্তী সুইং লো থেকে উঁচুতে অবস্থিত।
কোন ফিনান্সিয়াল অ্যাসেট যখন ক্রমাগত এভাবে হায়ার সুইং হাই এবং হায়ার সুইং লো তৈরি করবে তখন বুঝতে হবে ফিনান্সিয়াল অ্যাসেটটি আপট্রেন্ডে রয়েছে।
উপরের চিত্রে প্রত্যেকটির নীল রং এর বক্সগুলো লোয়ার সুইং হাই নির্দেশ করে। এখানের প্রত্যেকটি বক্স তার পূর্ববর্তী বক্সের থেকে নিচে অবস্থিত।একই সাথে ছবির লাল রং এর বক্সগুলো বক্সগুলো লোয়ার সুইং লো নির্দেশ করে। এখানে প্রত্যেকটি সুইং লো তার পূর্ববর্তী সুইং লো থেকে নিচে অবস্থিত।
কোন ফিনান্সিয়াল অ্যাসেট যখন ক্রমাগত এভাবে লোয়ার সুইং হাই এবং লোয়ার সুইং লো তৈরি করবে তখন বুঝতে হবে ফিনান্সিয়াল অ্যাসেটটি ডাউনট্রেন্ডে রয়েছে।
যেসকল বিনিয়োগকারী ট্রেন্ড ফলোয়িং স্ট্র্যাটেজি ব্যবহার করেন তারা যদি নিশ্চিত হন যে মার্কেট আপট্রেন্ডে রয়েছে এবং তা চলমান থাকবে তখন তারা আপ ট্রেন্ডের Throw Back এ কোনো ফিনান্সিয়াল অ্যাসেট ক্রয় করেন এবং মার্কেট যখন নতুন সুইং হাই তৈরি করে তখন তারা তা বিক্রি করেন।
ট্রেন্ডলাইন এর মাধ্যমে ট্রেন্ড চিহ্নিত করা :
কয়েকটি হায়ার সুইং লো বরাবর যখন গা ঘেঁষে উপরের দিকে ট্রেন্ড লাইন আঁকা যায় তখন তা আপট্রেন্ড হিসেবে বিবেচিত হয়।ট্রেন্ড লাইন সাপোর্ট এরিয়া হিসেবে কাজ করে থাকে।

কয়েকটি লোয়ার সুইং হাই বরাবর যখন গা ঘেঁষে নিচের দিকে ট্রেন্ড লাইন আঁকা যায় তখন তা ডাউনট্রেন্ড হিসেবে বিবেচিত হয়।

মুভিং এভারেজ দিয়ে যেভাবে ট্রেন্ড চিহ্নিত করা হয়:
ট্রেন্ড চিহ্নিত করার জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ইন্ডিকেটর হচ্ছে মুভিং এভারেজ(Moving average)।
ট্রেডাররা চার্টে কয়েকটি মুভিং এভারেজ সংযুক্ত করেন। প্রাইস যখন মুভিং এভারেজ এর উপরে থাকে এবং মুভিং এভারেজ গুলো উপরের দিকে নির্দেশিত হয় তখন একে আপ ট্রেন্ড বলে ধরে নেওয়া হয়।
অপরদিকে প্রাইস যখন মুভিং এভারেজ এর নিচে থাকে এবং মুভিং এভারেজগুলো নিচের দিকে নির্দেশিত হয় তখন ট্রেডাররা মার্কেট ডাউন ট্রেন্ডে আছে বলে ধরে নেন। মুভিং এভারেজ ডায়নামিক সাপোর্ট ও রেজিস্টেন্স হিসেবেও কাজ করে।
উপরের চার্টে দুটি মুভিং এভারেজ(MA 20 & MA 30 ) ব্যবহার করা হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ক্যান্ডেল গুলো মুভিং এভারেজ এর উপরে অবস্থান করছে এবং দুটি মুভিং এভারেজই উপরের দিকে নির্দেশিত হচ্ছে এক্ষেত্রে সহজেই বুঝা যায় ফিনান্সিয়াল এসেটটি এখানে আপট্রেন্ডে রয়েছে।
উপরের চার্টে দুটি মুভিং এভারেজ(MA 20 & MA 30 ) ব্যবহার করা হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ক্যান্ডেল গুলো মুভিং এভারেজ এর নিচে অবস্থান করছে এবং দুটি মুভিং এভারেজই নিচের দিকে নির্দেশিত হচ্ছে এক্ষেত্রে সহজেই বুঝা যায় ফিনান্সিয়াল এসেটটি এখানে ডাউনট্রেন্ডে রয়েছে।
ট্রেন্ডের পরিবর্তন:
কোনো কোম্পানির শেয়ার হঠাৎ করে আপট্রেন্ড থেকে ডাউনট্রেন্ডে পরিবর্তন হয় না। আপট্রেন্ডে চলমান একটি ট্রেন্ড ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে তারপর ডাউনট্রেন্ড শুরু হয়। কোনো একটি কোম্পানির শেয়ার যখন অনেক বেশি পরিমাণে কেনা হয়ে যায় এবং বিনিয়োগকারীরা বিশ্বাস করেন এই কোম্পানির শেয়ারের মূল্য এর থেকে বেশি বৃদ্ধি পাবে না বা পাওয়া উচিত নয় তখন বিনিয়োগকারীরা নতুন করে ঐ কোম্পানির শেয়ার কিনতে আগ্রহী হন না। তখন ঐ কোম্পানীর শেয়ারের ক্রেতা থেকে বিক্রেতার পরিমাণ বেশি থাকে। তাই ঐ কোম্পানির শেয়ারের মূল্য আপ ট্রেন্ড থেকে ধীরে ধীরে ডাউনট্রেন্ডে যেতে শুরু করে।
আবার,কোনো কোম্পানির শেয়ার হঠাৎ করে ডাউনট্রেন্ড থেকে আপট্রেন্ডে পরিবর্তন হয় না। ডাউনট্রেন্ডে চলমান একটি ট্রেন্ড ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে তারপর আপট্রেন্ড শুরু হয়। কোনো একটি কোম্পানির শেয়ারের মূল্য যখন অনেক বেশি কমে যায় এবং বিনিয়োগকারীরা বিশ্বাস করেন এই কোম্পানির শেয়ারের মূল্য এর থেকে বেশি কমা উচিত নয় তখন বিনিয়োগকারীরা ঐ কোম্পানির শেয়ার কিনতে আগ্রহী হন। তখন ঐ কোম্পানীর শেয়ারের বিক্রেতা থেকে ক্রেতার পরিমাণ বেশি থাকে। তাই ঐ কোম্পানির শেয়ারের মূল্য ডাউনট্রেন্ড থেকে ধীরে ধীরে আপট্রেন্ডে যেতে শুরু করে।
সর্বশেষে বলা যায়,একটি ফিনান্সিয়াল অ্যাসেট এর ট্রেন্ড সঠিকভাবে বুঝতে পারা একজন বিনিয়োগকারীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ট্রেন্ডের শুরু থেকে যদি তা বুঝতে পারা যায় তাহলে আপট্রেন্ডের শুরুর দিকে ক্রয় করে একজন বিনিয়োগকারী সর্বোচ্চ লাভবান হতে পারবেন। এছাড়াও একটি চলমান ট্রেন্ডের দুর্বল হয়ে যাওয়া বুঝতে পারাও একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এতে করে আসন্ন ট্রেন্ড রিভার্সাল সম্পর্কে বিনিয়োগকারী সচেতন থাকতে পারেন।
প্রথম পর্বটি পড়ার জন্য ক্লিক করুন – টেকনিকাল এনালাইসিসের প্রাথমিক ধারণা : টেকনিকাল এনালাইসিস পর্ব ১