বেসরকারি বা প্রাইভেট কোম্পানির মূল্যায়ন
একটি পাবলিক কোম্পানির ভ্যালু খুব সহজেই কোম্পানিটির শেয়ারের মূল্যের সাথে শেয়ারের সংখ্যা গুণ করে নির্ণয় করা যায়। তবে প্রাইভেট কোম্পানির মূল্যায়ন প্রক্রিয়াটি এতটা সহজ নয়। প্রাইভেট কোম্পানিগুলো তাদের আর্থিক প্রতিবেদন জনসাধারণের জন্য প্রকাশ করে না। এছাড়াও শেয়ার লেনদেনের জন্য কোন এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত না থাকায় প্রয়োজনীয় তথ্যের অভাবে প্রাইভেট কোম্পানি মূল্যায়ন করা বেশ জটিল হয়ে যায়। প্রাইভেট কোম্পানি এবং কীভাবে তাদের মূল্যায়ন করা যায় তা বিস্তারিত আলোচনা করা হল।
প্রাইভেট কোম্পানিগুলো কেন মূল্যায়ন করবো?
একটি কোম্পানির আর্থিক অবস্থার মূল্যায়ন শুধু কোম্পানিটির জন্য নয়, বিনিয়োগকারীদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, কোম্পানিগুলো আর্থিক মূল্যায়নের মাধ্যমে তাদের অগ্রগতি ও লক্ষ্য অর্জনে কতটা সফল এবং প্রতিযোগী কোম্পানিগুলোর তুলনায় বাজারে তাদের পারফরমান্স কতটা সন্তুষ্টজনক তা পরিমাপ করে। অপরদিকে বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির আর্থিক অবস্থার মূল্যায়ন একটি সম্ভাব্য বিনিয়োগের মূল্য নির্ধারণ করতে ব্যবহার করে থাকে। এর জন্য বিনিয়োগকারীরা কোম্পানিকর্তৃক জনসাধারনের জন্য প্রকাশিত তথ্য ব্যবহার করে। মূল্যায়নটি যে উদ্দেশ্যেই ব্যবহার করা হোক না কেন, এটি মূলত কোম্পানিটির আর্থিক অবস্থার একটি সংক্ষিপ্ত ধারণা দিয়ে থাকে।
তবে পাবলিক কোম্পানিগুলোর আর্থিক মূল্যায়ন করা প্রাইভেট কোম্পানিগুলোর তুলনায় বেশ সহজ। কারণ পাবলিক কোম্পানিগুলো প্রাইভেট কোম্পানির মত নিজেদের তথ্য গোপন রাখে না বরং জনসাধারনের ব্যবহারের জন্য নিয়মিত প্রকাশ করে থাকে।
প্রাইভেট কোম্পানি বনাম পাবলিক কোম্পানির মালিকানাস্বত্ব
প্রাইভেট এবং পাবলিক কোম্পানির মধ্যে একটি অন্যতম পার্থক্য হল পাবলিক কোম্পানিগুলো তাদের শেয়ারের একটি নুন্যতম অংশ ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিং বা আইপিও এর সময় জনসাধারনের নিকট বিক্রয় করে। আইপিও কোম্পানির বহিঃভুক্ত একজন বিনিয়োগকারীকে কোম্পানিটির শেয়ার ক্রয়ের মাধ্যমে কোম্পানিটির ক্রয়কৃত শেয়ারের পরিমাণ মালিকানা লাভের সুযোগ করে দেয়। একটি পাবলিক কোম্পানি প্রতিষ্ঠার পর কোম্পানিটিকে তার দৈনন্দিন কার্যক্রম শুরু করার আগে আইপিওতে অংশগ্রহণ করে সেকেন্ডারি মার্কেটে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের নিকট একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ শেয়ার বিক্রয়ের আহ্বান জানাতে হয়।
অপরদিকে, প্রাইভেট কোম্পানির সব শেয়ার কিছু নির্দিষ্ট সংখ্যক শেয়ারহোল্ডারের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকে। এসকল বিনিয়োগকারীরা সাধারণত কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা, পারিবারিক কোম্পানির ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যরা, এছাড়াও এঞ্জেল ইনভেস্টর বা ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট হয়ে থাকেন। একাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী প্রাইভেট কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদন তৈরির সময়ে পাবলিক কোম্পানির মত সকল আনুষ্ঠানিকতা পালন করা আবশ্যক নয়। তাই প্রাইভেট কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করা পাবলিক কোম্পানির তুলনায় সহজ।
প্রাইভেট কোম্পানি বনাম পাবলিক কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন
পাবলিক কোম্পানিগুলোকে আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুতের সময় একাউন্টিং ও রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ডগুলো অবশ্যই মেনে চলতে হয়। এই স্ট্যান্ডার্ড বা বিধিগুলো সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (SEC) কর্তৃক নির্ধারিত যার মধ্যে শেয়ারহোল্ডারদের বার্ষিক ও ত্রৈমাসিক আয়ের রিপোর্ট, আভ্যন্তরীণ লেনদেন ও অন্যান্য কার্যক্রমের নোটিশ ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত।
প্রাইভেট কোম্পানিগুলো এরূপ বিধি-বিধান দ্বারা আবদ্ধ নয়। ফলে তারা এসইসি কর্তৃক নির্ধারিত পলিসি ও পাবলিক শেয়ারহোল্ডারদের কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ ছাড়াই নিজস্ব ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালন করতে পারে। প্রাইভেট কোম্পানিগুলোর বেসরকারিভাবে পরিচালিত হওয়ার অন্যতম আকর্ষণই হল প্রাইভেট কোম্পানিগুলোকে রিপোর্টিংয়ের জন্য প্রণীত কঠোর বিধিমালা অনুসরণ করতে হয় না।
মূলধনের সংস্থান
পাবলিক কোম্পানি
পাবলিক কোম্পানিগুলোর একটি অন্যতম সুবিধা হল এই কোম্পানিগুলো মূলধন সংগ্রহের জন্য শেয়ার বিক্রয় ও কর্পোরেট বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে সরকারি আর্থিক সংস্থাগুলোর সাহায্য নিতে পারে। এ জাতীয় মূলধন সহজলভ্য হওয়ায় পাবলিক কোম্পানিগুলো নতুন প্রকল্প গ্রহণ বা ব্যবসায় সম্প্রসারণ ইত্যাদির জন্য খুব সহজেই মূলধনের সংস্থান করতে পারে।
প্রাইভেট কোম্পানি
যদিও প্রাইভেট কোম্পানিগুলো সাধারণ বিনিয়োগকারীদের থেকে মূলধন সংগ্রহ করতে পারেন না, তবুও কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে প্রাইভেট কোম্পানিগুলোর মূলধন সংগ্রহ করার প্রয়োজন হয়। এর ফলে কোম্পানিটিকে তার শেয়ারের কিছু অংশ মূলধণের জন্য বিক্রয় করতে হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কোম্পানি তার কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের মধ্যে থেকে কয়েকজনকে কোম্পানির বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে তাদের অবদানের জন্য শেয়ার ক্রয়ের জন্য নির্বাচন করতে পারে।
প্রাইভেট কোম্পানিগুলো অন্যান্য প্রাইভেট আর্থিক কোম্পানি বা বেসরকারি বিনিয়োগকারী অথবা ভেনচার ক্যাপিটালিস্টদের কাছ থেকেও মূলধন সংগ্রহ করে থাকে। এ ক্ষেত্রে যারা প্রাইভেট কোম্পানিতে বিনিয়োগ করবেন তারা যেন সহজেই কোম্পানিটির আর্থিক মূল্যায়ন করতে পারেন সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। নিম্নে বিনিয়োগকারীদের দ্বারা ব্যবহৃত প্রাইভেট কোম্পানির আর্থিক মূল্যায়নের কয়েকটি পদ্ধতি আলোচনা করা হলঃ
একাধিক কোম্পানির মধ্যে তুলনামূলক মূল্যায়ন
সাধারণত প্রাইভেট কোম্পানির মূল্যায়নের জন্য কোম্পানির তুলনামূলক মূল্যায়ন বা কম্পেয়ারেবল কোম্পানি এনালাইসিস (CCA) ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতিটি প্রাইভেট কোম্পানির কার্যক্রমের সাথে মিল রয়েছে এমন পাবলিক কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় একই শিল্পখাতের অধীনে কার্যরত একাধিক কোম্পানি, প্রতিযোগী কোম্পানিসমূহ, একই আকারের বা বয়সের কোম্পানির মধ্যে তুলনা করা হয়। এক্ষেত্রে একই শিল্পখাতের অধীনে সাধারণত একাধিক কোম্পানির মধ্যে সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। একটি অর্থনীতিতে কোন একটি শিল্পখাত প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে একটি প্রাইভেট কোম্পানি শিল্পখাতটিতে কীভাবে তার ব্যবসায়িক কার্যক্রম সুষ্ঠভাবে করতে পারে তা নির্ণয়ের জন্য কোম্পানির আর্থিক মূল্যায়ন করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, একটি মাঝারি আকারের পোশাকের খুচরা বিক্রয়কারী কোম্পানির মূল্যায়ন করার জন্য একই আকারের ও ধরণের একাধিক পাবলিক কোম্পানির সাথে আর্থিক অবস্থার তুলনার করা হবে। কোন কোন কোম্পানিগুলোর মধ্যে তুলনা করা হবে তা নির্ধারণ করা হয়ে গেলে কোম্পানিগুলোর অপারেটিং মার্জিন, ফ্রি-নগদ প্রবাহ, প্রতি বর্গফুটে বিক্রয় ইত্যাদির গড় মান তুলনা করা হয়। প্রতি বর্গফুটে বিক্রয় পোশাক কোম্পানিগুলোর মুল্যায়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
প্রাইভেট ইক্যুইটি মূল্যায়ন ম্যাট্রিক্স
মূল্য-আয় অনুপাত, মুল্য-বিক্রয় অনুপাত, ফ্রি-নগদ প্রবাহ ইত্যাদির পাশাপাশি ইক্যুইটি মূল্যায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইবিআইডিটিএ (EBIDTA) এর মাধ্যমে একটি কোম্পানির এন্টারপ্রাইজ ভ্যালু নির্ণয় করা হয়, তাই একে এন্টারপ্রাইজ ভ্যালুও বলা হয়। এটি মূল্যায়নের ক্ষেত্রে যথাযথ ফলাফল নির্ণয়ে সহায়তা করে কারণ এতে ঋণের পরিমাণ ও গণনা করা হয়। এটি এন্টারপ্রাইজ ভ্যালুকে সুদের কর, অবচয় ও অবমূল্যায়ন (EBIDTA) ইত্যাদি গণনার পূর্ববর্তী আয় দ্বারা ভাগ করে নির্ণয় করা হয়। একটি কোম্পানির এন্টারপ্রাইজ ভ্যালু বলতে কোম্পানিটির বাজার মূলধন, ঋণ ( নগদ ও চলতি সম্পদ হতে সুদ, অগ্রাধিকার শেয়ার বাদ দিয়ে) ইত্যাদির সমষ্টিকে বোঝায়। যদি কোম্পানিটি এমন কোন শিল্পখাতের অধীনে পরিচালিত হয় যা সম্প্রতি কোন অধিগ্রহণ বা কোম্পানির মার্জার বা আইপিও ইত্যাদিতে অংশগ্রহণ করেছে, সেক্ষেত্রে মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় এসব লেনদেনে প্রকাশিত বিভিন্ন আর্থিক তথ্য ব্যবহার করা যেতে পারে। যেহেতু ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকার ও কর্পোরেট ফিনান্সে কর্মরত ব্যক্তিরা ইতিমধ্যে প্রতিযোগী কোম্পানিগুলোর আর্থিক অবস্থার মূল্যায়ন করেছে, সেহেতু সেখান থেকে প্রাপ্ত তথ্যাদি ব্যবহার করে মূল কোম্পানিটির আর্থিক মূল্যায়নের জন্য অন্যান্য কোম্পানির আনুমানিক বাজার মূল্য নির্ণয় করা সম্ভব। তবে দুইটি একই ধরণের প্রাইভেট কোম্পানির ক্ষেত্রে গড় তথ্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে কোন সন্তুষ্টজনক ফলাফল পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে সমগোত্রীয় পাবলিক কোম্পানির সাথে তুলনা করা হয়। এতে করে কোম্পানির আর্থিক অবস্থার যথাযথ মূল্যায়ন করা তুলনামূলকভাবে সহজ হয়।
বাট্টাযুক্ত নগদ প্রবাহ নির্ণয় করা
বাট্টাযুক্ত নগদ প্রবাহ পদ্ধতিতে সমগোত্রীয় প্রাইভেট কোম্পানিগুলোর মধ্যে থেকে ব্যবসায়িক কার্যক্রমে মিল রয়েছে এমন কোম্পানিগুলোর বাট্টাযুক্ত নগদ প্রবাহ সংগ্রহ করে মূল কোম্পানির সাথে তুলনা করা হয়। এর জন্য সর্বপ্রথম সমগোত্রীয় কোম্পানিগুলোর আয় বৃদ্ধির হারের গড় নির্ণয় করে মূল কোম্পানিটির আয় বৃদ্ধির হার অনুমান করা হয়। তবে প্রায়শই কোম্পানির বর্তমান অবস্থা এবং ব্যবস্থাপনা ও হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি এর ভিত্তিতে প্রাইভেট কোম্পানিগুলোর জন্য এটি একটি কষ্টসাধ্য বিষয়। কারণ প্রাইভেট কোম্পানিগুলো সাধারণত পাবলিক কোম্পানিগুলোর মত হিসাবরক্ষণের সকল বিধিনিষেধ পালন করতে বাধ্য থাকে না। ফলে এই দুই ধরনের কোম্পানির আর্থিক বিবরণীতে ব্যাপক পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। অনেক সময়ে প্রাইভেট কোম্পানির আর্থিক বিবরণীতে ব্যক্তিগত খরচের হিসাবও অন্তর্ভুক্ত থাকার ঝুঁকি থাকে। এই একই সমস্যা একমালিকানা ব্যবসায় ও অংশীদারি এর ক্ষেত্রেও বিদ্যমান, তবে এতে মালিকের বেতন, লভ্যাংশের খরচ ইত্যাদিও অন্তর্ভুক্ত থাকে। আয়ের হার অনুমান করার পর পরিচালন ব্যয়, কর এবং পরিচালন মূলধন নির্ণয় করা হয়। এরপর ফ্রি-নগদ প্রবাহ নির্ণয় করা হয়। এর থেকে মূলধন ব্যয় বাদ দেওয়ার পর পরিচালন নগদ প্রবাহ এর পরিমাণ পাওয়া যায়। বিনিয়োগকারীরা সাধারণত শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ ও অন্যান্য খরচ পরিশোধের জন্য কি পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন তা অনুমানের জন্য ফ্রি-নগদ প্রবাহ ব্যবহার করেন।
প্রাইভেট কোম্পানিগুলোর বেটা এর মান নির্ণয় করা
পরবর্তী পদ্ধতি হল সমগোত্রীয় কোম্পানি বা পিয়ার কোম্পানিগুলোর বেটা, করের হার, ঋণ- ইক্যুইটির পরিমাণ ইত্যাদি নির্ণয় করা। এরপর ভারযুক্ত গড় মূলধন ব্যয় (WACC) নির্ণয় করা হয়। WACC কোম্পানির গড় মূলধন ব্যয় ঋণ ও ইক্যুইটি এর মাধ্যমে অর্থ-সংস্থান করা হয় কিনা তা নির্ণয় করে। এর জন্য ইক্যুইটি এর ব্যয় ক্যাপিটাল এসেট প্রাইজিং মডেল (CAPM) এর মাধ্মে নির্ণয় করা হয় এবং ঋণের ব্যয় কোম্পানিটির উপর ধার্যকৃত সুদের হার ও পূর্ববর্তী ঋণসমূহ পর্যালোচনা করে নির্ণয় করা হয়। WACC গণনার সময় বিস্তারিত মূলধন কাঠামোর পাশাপাশি ঋণ ও ইক্যুইটির ভার, পিয়ার কোম্পানিগুলোর মূলধন ব্যয় ইত্যাদি বিবেচনা করতে হবে।
মূলধন কাঠামো নির্ধারণ করা
যদিও একটি প্রাইভেট কোম্পানির মূলধন কাঠামো নির্ণয় করা একটি কষ্টসাধ্য বিষয়, শিল্প গড় নির্ণয় এক্ষেত্রে যথেষ্ট সহায়তা করে থাকে। তবে এতে প্রাইভেট কোম্পানিগুলোর ইক্যুইটি ও ঋণের ব্যয় তুলনামূলক বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই গড় মূলধন কাঠামো নির্ণয়ে এই বর্ধিত খরচগুলো হিসাবে দাখিল করার সময় কিছু সমন্বয় করার প্রয়োজন হয়। তারল্যের অভাবে ফার্মের ইক্যুইটির ভারসাম্য রাখার জন্য প্রায়শই প্রাইভেট কোম্পানিগুলোর ইক্যুইটি ব্যয়ের সাথে প্রিমিয়াম যোগ করা হয়। যথাযথভাবে একটি আনুমানিক মূলধন কাঠামো নির্ণয় করার পর WACC নির্ণয় করা হয়। WACC নির্ণয়ের মাধ্যমে একটি বাট্টার হার পাওয়া যায় যা দ্বারা কোম্পানির নগদ প্রবাহকে বাট্টাকরণের মাধ্যমে কোম্পানিটির আর্থিক অবস্থার যথাযথ মূল্যায়ন করা যায়। সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করার জন্য প্রাপ্ত এই বাট্টার হারের সাথে প্রায়ই পূর্বের উল্লিখিত প্রিমিয়ামটি যোগ করা হয়ে থাকে।
প্রাইভেট কোম্পানি মূল্যায়নে যেসকল সমস্যা দেখা যায়
- প্রাইভেট কোম্পানির আর্থিক মূল্যায়নের জন্য একাধিক বৈধ পদ্ধতি থাকলেও এগুলোর মাধ্যমে একেবারে নির্ভুল মূল্যায়ন করা সম্ভব হয় না। কারণ এই মূল্যায়নটি এক বা একাধিক আনুমানিক মানের উপর ভিত্তি করে গণনা করা হয়।
- এছাড়াও কিছু অনিয়মিত ব্যবসায়িক লেনদেন বা ঘটনার ফলে সমগোত্রীয় কোম্পানিগুলো নানাভাবে প্রভাবিত হয়, ফলে মূল কোম্পানির মূল্যায়নও প্রভাবিত হয়। এসকল পরিস্থিতির কারণে কোম্পানির আর্থিক অবস্থার মূল্যায়ন প্রক্রিয়াটি জটিল হয়ে যায় এবং মূল্যায়নটির নির্ভরযোগ্যতাও কমে যায়।
- অপরদিকে, পাবলিক কোম্পানির আর্থিক মূল্যায়ন নির্ভুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। কারণ পাবলিক কোম্পানির মূল্যায়ন বাস্তব তথ্যের উপর ভিত্তি করে নির্ণয় করা হয়। ফলে এর নির্ভরযোগ্যতা তুলনামূলকভাবে বেশি।
উপরক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে প্রাইভেট কোম্পানির মূল্যায়ন আনুমানিক ঘটনা বা লেনদেন, সর্বোত্তম অনুমান ও শিল্পখাতের গড় মানগুলো ব্যবহার করে করা হয়। যেহেতু প্রাইভেট কোম্পানিগুলো তাদের আভ্যন্তরীণ তথ্য জনসাধারনের ব্যবহারের জন্য প্রকাশ করে না সেহেতু এই কোম্পানিগুলোর মূল্যায়ন করা একটি কষ্টসাধ্য কাজ। তাই একটি যথাযথ ও নির্ভরযোগ্য মূল্যায়নের জন্য প্রাইভেট কোম্পানি ও কর্পোরেট ফিনান্স এডভাইসরি কর্তৃক একাধিক পদ্ধতি ব্যবহার করে তা মূল্যায়ন করা হয়।