Money Market – মুদ্রা বাজার

মুদ্রা বাজার (Money Market) কোনো দেশের অর্থনীতির একটি অপরিহার্য অংশ। যে সকল ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান সুদের বিনিময়ে Short term বা স্বল্পমেয়াদী (১ বছর বা তার কম সময়ের জন্য) তহবিল আদান প্রদান করে থাকে তাদেরকে নিয়েই মূলত মুদ্রা বাজার বা money market গঠিত। ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান সমূহের স্বল্পমেয়াদি তারল্যের (Liquidity) উদ্বৃত্ত (Surplus) এবং ঘাটতির (Deficit) সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা মুদ্রা বাজারের মূল লক্ষ্য। বাংলাদেশের মুদ্রা বাজারকে মূলত দুইটি ভাগে ভাগ করা যায়।

১.  প্রাতিষ্ঠানিক: কেন্দ্রীয় ব্যাংক, ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান সমূহ, অ-তফসিলী ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক ইত্যাদি।

২. অপ্রাতিষ্ঠানিক: মানি লেন্ডার ও স্বল্প পরিসরের সমবায় সমিতি সমূহ যারা সরাসরি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রনাধীন নয়।

মুদ্রা বাজারের উপাদানসমূহ (Money Market Instruments)

মুদ্রা বাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে স্বল্প হারে মুনাফা অর্জিত হলেও এটি পুজিঁ বাজারের তুলনায় কম ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ধরে নেয়া হয়। বর্তমানে মুদ্রা বাজারে প্রচলিত জনপ্রিয় Instrument গুলো সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হল-

Money Market Instruments

১. ট্রেজারি বিল  (Treasury Bill or T-Bill)

ট্রেজারি বিল  (Treasury Bill or T-Bill) হল স্বল্পমেয়াদি বাজেট ঘাটতি এবং অন্যান্য তহবিল চাহিদা মেটানোর উদ্দেশ্যে সরকার কর্তৃক ইস্যুকৃত স্বল্পমেয়াদি শর্তহীন ঋণপত্র। বিলের মেযাদ উত্তীর্ণ হলে সরকার বিনিয়োগকারীকে নিঃশর্তভাবে অভিহিত মূল্য ফেরত প্রদানের অঙ্গীকার করে থাকে। ট্রেজারি বিলে মুনাফার হার খুব বেশি আকর্ষণীয় না হলেও ঝুকিঁহীন নিরাপদ বিনিয়োগের একটি জনপ্রিয় মাধ্যম হিসেবে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এটি বাংলাদেশ ব্যাংক আয়োজিত সাপ্তাহিক নিলামের মাধ্যমে (সাধারণত নিলাম টি রবিবারে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে) ক্রয়-বিক্রয় করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকে তালিকাভুক্ত যেকোনো প্রতিষ্ঠান এই নিলামে অংশগ্রহণ করতে পারে। পরবর্তীতে ট্রেজারি বিল সেকেন্ডারি মার্কেটে ক্রয়-বিক্রয় করা যায়। বর্তমানে বাজারে ৯১ দিন মেয়াদি, ১৮২ দিন মেয়াদি এবং ৩৬৪ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিল প্রচলিত রয়েছে।

ট্রেজারি বিল ক্রয়ের ক্ষেত্রে দুইটি পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে:

১।  প্রাইমারি ডিলারের মাধ্যমে প্রতি সপ্তাহে অনুষ্ঠিত নিলাম থেকে ট্রেজারি বিল ক্রয় করা যায়।

২। যেকোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে যেকোনো সময় ট্রেজারি বিল ক্রয় করা যায়।

ট্রেজারি বিলের বৈশিষ্ট্য-

  • ট্রেজারি বিল একটি স্বল্পমেয়াদি সরকারি ঋণপত্র
  • ট্রেজারি বিলের সুদের হার নিলামের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়।
  • ট্রেজারি বিল সেকেন্ডারি মার্কেটে ক্রয়-বিক্রয় করা হয়।
Money Market Instrument - Tbills interest rate of Bangladesh Government
৯১দিন, ১৮২ দিন এবং ৩৬৪ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের উপর সরকার প্রদত্ত গত এক বছরের সুদের হার

২. আমানত সার্টিফিকেট  (Certificate of Deposit)

আমানত সার্টিফিকেট (Certificate of Deposit or CD) ব্যাংক বা বিভিন্ন ক্রেডিট ইউনিয়ন কর্তৃক প্রদত্ত একটি নিরাপদ বিনিয়োগের মাধ্যম, যার জন্য বিনিয়োগকারীকে মুনাফার বিনিময়ে একটি বড় অংকের আমানত জমা রাখতে হয় এবং সাধারণত মেয়াদ উর্ত্তীণ হওয়ার পূর্বে আমানতকৃত অর্থ উত্তোলনের ক্ষেত্রে শর্ত আরোপিত হয়। অনেক সময় জরিমানাও হয়ে থাকে। ঈউ এর মেয়াদ সাধারণত ৩, ৬, ৯ মাস বা ১ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে।

Money Market Instrument - Certificate of Deposit or CD

আমানত সার্টিফিকেটের বৈশিষ্ট্য-

  • আমানত সার্টিফিকেটে (CD) সঞ্চয়ী হিসাব এবং অন্যান্য মানি মার্কেট বিনিয়োগের তুলনায় উচ্চ হারে মুনাফা প্রদান করা হয়।
  • শেয়ার, বন্ড ও অন্যান্য বিনিয়োগের মাধ্যমের তুলনায় মুনাফার হার (fixed return) কম হলেও নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে এর ব্যাপক চাহিদা লক্ষ্য করা যায়। মুনাফার হারে কোনো তারতম্য হয় না বিধায় বিনিয়োগের নিরাপত্তা বজায় থাকে।
  • সাধারণত CD খোলার সময় বিভিন্ন প্রকার বৈশিষ্ট্য এবং মেয়াদি (যেমন: ৩,৬, ১৮ মাস বা ১ বছর মেয়াদি) আমানত সার্টিফিকেট খোলার সুযোগ বিনিয়োগকারী পেয়ে থাকেন। এর মধ্যে থেকে বিনিয়োগকারী তার সুবিধামত CD নির্বাচন করতে পারেন।
  • যেহেতু CD তে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সঞ্চিত অর্থ একটি দীর্ঘসময়ের জন্য বিনিয়োগ করা হয় এবং উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়, সে জন্য মেয়াদ উর্ত্তীণ হওয়ার পূর্বে আমানতকৃত অর্থ উত্তোলনের ক্ষেত্রে জরিমানা বা চার্জ (Early Withdrawal Penalties) কাটা হয়।

৩. কমার্শিয়াল পেপার (Commercial Paper)

কমার্শিয়াল পেপার একটি স্বল্পমেয়াদি মুদ্রাবাজার সিকিউরিটি যা সাধারণত বড় বড় কোম্পানি গুলো তাদের চলতি মূলধন চাহিদা মেটানোর জন্য ইস্যু করে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশমালা অনুসারে কমার্শিয়াল পেপারের মেয়াদ সর্বনি¤œ ৭ দিন থেকে সর্বোচ্চ ১ বছর পর্যন্ত হতে পারে। কমার্শিয়াল পেপার সাধারণত প্রাইমারি মার্কেটে কর্পোরেশন গুলো ইস্যু করে থাকে। তবে সেকেন্ডারি মার্কেটে এগুলো পুনঃবিক্রয়ের সুযোগ কম। কমার্শিয়াল পেপার সাধারণত ডিস্কাউন্ট রেট এ ইস্যু করা হয়।

Money Market Instrument - Commercial Paper

কমার্শিয়াল পেপারের বৈশিষ্ট্য-

  • কোম্পানিগুলো তাদের সুবিধা মত মেয়াদের জন্য তহবিল চাহিদা মেটাতে সরাসরি বিনিয়োগকারীদের কাছে অথবা ব্যাংক/ডিলারের মাধ্যমে কমার্শিয়াল পেপার ইস্যু করতে পারে।
  • বড় বড় কোম্পানিগুলোর জন্য স্বল্প হারে স্বল্পমেয়াদি মূলধনের চাহিদা পূরণ করে থাকে।
  • মার্কেটে মূলধন ঘাটতি চলাকালীন সময়ে এই পেপারের মাধ্যমে ফান্ড কালেক্ট করা কঠিন হয়ে পড়ে।
  • বিনিয়োগকারী মেয়াদ উর্ত্তীণ হওয়ার পূর্বে এই পেপারে বিনিয়োগকৃত অর্থ তুলে নিতে চাইলে জরিমানা বা পেনাল্টি চার্জ যুক্ত হয়।
  • যেহেতু এই পেপারগুলো মূলধন দ্বারা সুরক্ষিত নয় (Not backed by the capital of Issuing company), এই জন্য issuing company এর ক্রেডিট রেটিং এর উপর ভিত্তি করে একমাত্র ভালো রেটিং পাওয়া কোম্পানি গুলোই কমার্শিয়াল পেপার ইস্যু করতে পারে।
  • কমার্শিয়াল পেপার এর অভিহিত মূল্য (face value) থেকে ডিস্কাউন্টে বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রয় করা হয়। অনেক সময় বন্ডের থেকে অধিক হারে মুনাফা দিয়ে থাকে।

৪. রেপো এরং রিভার্স রেপো  (Repo & Reverse Repo)

কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক মুদ্রানীতি বাস্তবায়নের অন্যতম হাতিয়ার হল রেপো এরং রিভার্স রেপো। রিপো মানে repurchase agreement অর্থাৎ এখন বিক্রি করছি কিন্তু পুনরায় কিনে নেব এই শর্তে। স্বাভাবিকভাবে এখন কম দামে বিক্রি করতে হবে এবং একটা সময় পরে একই জিনিস বেশি দামে কিনে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। রিভার্স রিপো মানে রিপোর বিপরীত অর্থাৎ এখন ক্রয় করছি কিন্তু পুনরায় বিক্রি করে দিব এই শর্তে।

Money Market Instrument - Repo and Reverse Repo

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলি কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যে সুদে স্বল্পমেয়াদী ঋণ নেয় তাকে রেপো রেট বলে আরো বিস্তারিত বলতে গেলে বলতে হয়, তারল্য ব্যবস্থাপনা (Liquidity Management) সহজ করার জন্য ট্রেজারি বিল, ট্রেজারি বন্ড (Bills and Securities) জামানত হিসেবে রেখে ব্যাংকগুলোকে স্বল্পমেয়াদি তহবিল দেওয়ার যে প্রক্রিয়া, তাকে রেপো বলা হয়।

ব্যাংকগুলি তাদের উদ্বৃত্ত অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা বাংলাদেশ ব্যাংকে রেখে যে হারে সুদ পায় তাকে বলে রিভার্স রেপো রেট।

Repo and Reverse Repo Rate in Bangladesh Bank
তথ্যসূত্রঃ বাংলাদেশ ব্যাংক

রেপো এরং রিভার্স রেপোর  বৈশিষ্ট্য-

  • রেপো এবং রিভার্স রেপো বাণিজ্যিক ব্যাংক গুলোর জন্য স্বল্পমেয়াদি তহবিলের উৎস হিসেবে অন্যতম ভুমিকা পালন করে থাকে।
  • স্বল্পমেয়াদি হলেও এর মেয়াদ সাধারনত ১/২ দিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।
  • রেপো ও রিভার্স রেপোকে ব্যাংকিং খাতের পলিসি টুলস বলা হয় এবং এর সুদ হারকে বলা হয় পলিসি রেট।
  • রেপো রেট কমলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ব্যয় হ্রাস পায়। রেপো রেট কমে গেলে ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত ঋণের পরিবর্তে সুদের হার ও হ্রাস পায়। এতে দেশের উৎপাদন ও শিল্প খাত অধিক ঋণ নিতে পারে এবং দেশের অর্থনীতি ত্বরান্বিত হয়।

পুঁজি বাজারের পাশাপাশি মুদ্রা বাজার ও দেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমরা মুদ্রা বাজার ও এর বিভিন্ন উপাদান সম্পর্কে জানলাম। পরবর্তী ব্লগে দেশীয় অর্থনীতির অন্য কোনো অংশ নিয়ে আমরা আলোচনা করব।

Comments (2)

  1. Sharfuddin Mahmud

    23 Oct 2022 - 3:10 pm

    Thank you so much for explaining money market instruments so nicely.

    • admin

      02 Mar 2023 - 4:32 am

      You are welcome sir

Add your Comment