
Listing Methods and Requirements | তালিকাভুক্তির উপায় এবং এর শর্তাবলি
তালিকাভুক্তির উপায় এবং এর শর্তাবলি
কোনো কোম্পানি শেয়ার ইস্যু করার জন্য দুইটি উপায় অবলম্বন করে শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত হতে পারে। আর তা হলো – আইপিও এবং ডিরেক্ট লিস্টিং। আমাদের আজকের ব্লগে আমরা আইপিও ও ডিরেক্ট লিস্টিং সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
আইপিও বা Initial Public Offering (IPO)
Initial Public Offering (IPO) বা আইপিও প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি থেকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তর এবং শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্তির একটি জনপ্রিয় মাধ্যম। BSEC এর পাবলিক ইস্যু আইন ২০১৫ অনুসারে কোনো কোম্পানি শেয়ার বাজারে শেয়ার ইস্যু করতে চাইলে তাকে নিম্নের শর্তগুলো মেনে আবেদন সম্পন্ন করতে হবে।
- সিকিউরিটি এন্ড এক্সচেঞ্জ আইন,১৯৮৭ এবং IFRS /IAS স্ট্যান্ডার্ড অনুসারে আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করতে হবে এবং বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অব অডিটিং , কোম্পানি আইন ১৯৯৪ অনুযায়ী অডিট সম্পন্ন করতে হবে।
- প্রসপেক্টাসে উল্লেখিত পেইড আপ ক্যাপিটাল এর সাথে আর্থিক বিবরনীর সামাঞ্জস্য থাকা অত্যাবশ্যক।
- কোম্পানি আইন ১৯৯৪ অনুযায়ী পেশাদার হিসাবরক্ষক কর্তৃক কোম্পানির সার্বিক ব্যয়ের পরিমান অডিট করতে হবে
- নিয়মিত বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আয়োজন করতে হবে
- কোম্পানির সম্প্রতি প্রস্তুতকৃত আর্থিক বিবরণী সমূহ সিকিউরিটি কমিশন কর্তৃক নির্বাচিত প্যানেল অডিটরের মাধ্যমে অডিট সম্পন্ন করতে হবে
- কোম্পানি কমিশন কর্তৃক প্রকাশিত কর্পোরেট গভর্নেন্স গাইডলাইনগুলির বিধানগুলি অনুসরণ করে এই বিষয়ে স্বীকৃতি প্রদান করতে হবে
- আবেদনের পূর্বে কোম্পানি আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়নি এই বিষয়ে স্বীকৃতি প্রদান করতে হবে
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ সিআইবি রিপোর্ট অনুসারে ইস্যুকারী বা এর যে কোনও পরিচালক এবং ১০%বা তার বেশি শেয়ার ধারণকারী কোনো ঋণ খেলাপি নয় এই বিষয়ে স্বীকৃতি প্রদান করতে হবে।
আইপিও প্রক্রিয়াটি সাধারনত ২ ভাবে করা যেতে পারে।
১। ফিক্সড প্রাইজ পদ্ধতি (Fixed Prize Method)
২। বুক বিল্ডিং পদ্ধতি (Book Building Method)
ফিক্সড প্রাইজ পদ্ধতি (Fixed Prize Method)
ফিক্সড প্রাইজ প্রক্রিয়ায়, কোম্পানি তাদের আন্ডার রাইটারদের সাথে কোম্পানির সম্পদ, দায় এবং প্রতিটি আর্থিক দিক মূল্যায়ন করে। তারপরে তারা নির্ধারিত মূলধন তহবিল অর্জনের জন্য প্রতি শেয়ার ইস্যুর জন্য একটি মূল্য নির্ধারণ করে। এই নির্ধারিত মূল্য অর্ডার ডকুমেন্টে প্রিন্ট করা হয়। অর্ডার ডকুমেন্টটি তে নির্ধারিত মুল্যের যৌক্তিকতা আলচনা করা হয়। একমাত্র শেয়ার ইস্যু সম্পন্ন হওয়ার পরে বিনিয়োগকারীদের নিকট শেয়ারটির চাহিদা জানা যায়। ফিক্সড প্রাইজ পদ্ধতিতে শেয়ার ইস্যু করতে হলে উপরে উল্লেখিত শর্তাদির পাশাপাশি কিছু অতিরিক্ত শর্ত পুরণ করা অত্তাবশ্যক। এগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো-
- এই পদ্ধতিতে পাবলিক অফারের মাধ্যমে উত্তোলিত মুল্ধনের পরিমাণ কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন বা পেইড আপ ক্যাপিটিলের শতকরা ১০ ভাগ অথবা ১৫ কোটি টাকার মধ্যে যেটি বেশী তার সমপরিমান হতে হবে।
- কোম্পানির বিদ্যমান পরিশোধিত মুল্ধন বা পেইড আপ ক্যাপিটালের পরিমাণ ১৫ কোটি বা তার বেশী হতে হবে
- কোম্পানিটি যদি তার বাণিজ্যিক (অপারেশন) কার্যক্রম তিন বছরের কম সময়ের জন্য পরিচালনা করে থাকে সেক্ষেত্রে ফিক্সড প্রাইজ পদ্ধতিতে শেয়ার ইস্যু করতে হলে ট্যাক্স প্রদান এবং নেট অপারেটিং নগদ প্রবাহের নির্বাহের পরে সাম্প্রতিক আর্থিক বছরের জন্য ইতিবাচক নিট মুনাফা থাকা অত্যাবশ্যক;
- কোম্পানিটি যদি তার বাণিজ্যিক পরিচালনা শুরু না করে বা কার্যক্রমের ১ বছর অতিক্রম না করে থাকে, সেক্ষেত্রে ট্যাক্স এবং নেট অপারেটিং নগদ প্রবাহের পরে এর ইতিবাচক প্রত্যাশিত নিট মুনাফা রয়েছে তা নিশ্চিত করতে হবে
- সর্বমোট ইস্যুর শতকরা পঁয়ত্রিশ শতাংশ (৩৫%) আন্ডার রাইটার কর্তৃক ফার্ম কমিট্মেন্ট ভিত্তিতে ইস্যূ করা হয়েছে তা নিশ্চিত করতে হবে
বুক বিল্ডিং পদ্ধতি (Book Building Method)
বাংলাদেশে বুক বিল্ডিং প্রক্রিয়ায় আইপিও পদ্ধতিটি ব্যাপক জনপ্রিয়। বুক বিল্ডিংপদ্ধতি, আইপিও প্রক্রিয়া চলাকালীন শেয়ারের মূল্য নির্ধারণ করা হয়। এক্ষেত্রে শেয়ারের কোনো স্থির মূল্য নেই, তবে শেয়ার ইস্যুকারী কোম্পানির অর্থনৈতিক অবস্থা ও সুনামের ভিত্তিতে যোগ্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীগন বিচার বিবেচনা করে শেয়ারের যৌক্তিক মুল্যের একটা সীমা নির্ধারণ করে দেয়। শেয়ারের সর্বনিম্ন দামকে ‘ফ্লোর প্রাইস’ হিসাবে উল্লেখ করা হয় এবং সর্বাধিক মূল্যটিকে “ক্যাপ প্রাইস” হিসাবে উল্লেখ করা হয়।
বিনিয়োগকারীরা যে মূল্যে শেয়ারটিই ক্রয় করতে চান, সেই মূল্যে পছন্দসই পরিমাণ শেয়ারের জন্য বিড করতে পারেন। বিনিয়োগকারীদের বিডের উপর নির্ভর করে শেয়ারের যথার্থ মূল্য নির্ধারণ করা হয়। বুক বিল্ডিং প্রক্রিয়ায় বিনিয়োগকারীদের চাহিদা সম্পর্কে নিয়মিত আপডেট পাওয়া যায়। বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে শেয়ার ইস্যু করতে হলে উপরে উল্লেখিত শর্তাদির পাশাপাশি কিছু অতিরিক্ত শর্ত পুরণ করা অত্তাবশ্যক। এগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো-
- এই পদ্ধতিতে পাবলিক অফারের মাধ্যমে উত্তোলিত মুল্ধনের পরিমাণ অন্তত ৫০ কোটি টাকা বা তার বেশি হতে হবে
- কোম্পানির বিদ্যমান পরিশোধিত মুল্ধন বা পেইড আপ ক্যাপিটালের পরিমাণ ৩০ কোটি বা তার বেশী হতে হবে
- কোম্পানিটি কমপক্ষে তিন বছর যাবত তার বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে তা নিশ্চিত করতে হবে;
- কোম্পানিটিকে বাণিজ্যিক কার্যক্রমের সাম্প্রতিক ২ বছরে ট্যাক্স ব্যতীত নিট মুনাফা অর্জন করতে হবে
- সাম্প্রতিক ২ বছরে ইতিবাচক নিট অপারেটিং নগদ প্রবাহ অর্জন করতে হবে
- ইস্যু পরিচালনার জন্য এটি ইস্যু ম্যানেজার এবং রেজিস্ট্রার হিসাবে পৃথক ব্যক্তি নিয়োগ করেছে তা নিশ্চিত করতে হবে
- কমিশনে নিবন্ধিত ক্রেডিট রেটিং সংস্থা কর্তৃক ইস্যুকারীকে রেটিং করা হয়েছে তা নিশ্চিত করতে হবে
সর্বমোট ইস্যুর শতকরা পঁয়ত্রিশ শতাংশ (৩৫%) আন্ডার রাইটার কর্তৃক ফার্ম কমিট্মেন্ট ভিত্তিতে ইস্যূ করা হয়েছে তা নিশ্চিত করতে হবে।
ফিক্সড প্রাইজ পদ্ধতি এবং বুক বিল্ডিং পদ্ধতির পার্থক্য
[table id=1 /]
ডিরেক্ট লিস্টিং বা Direct Listing
ডিরেক্ট লিস্টিং পদ্ধতিতে কোম্পানি কোনো মধ্যস্থতাকারীর সাহায্য ছাড়াই সরাসরি জনসাধারণের কাছে শেয়ার বিক্রি করে। ডিরেক্ট লিস্টিং পদ্ধতিতে কোনো আন্ডার রাইটার বা অন্যান্য মধ্যস্থতাকারীর প্রয়োজন পড়ে না, কোনো নতুন শেয়ার জারি করা হয় না এবং বিদ্যমান শেয়ার হোল্ডারদের জন্য লক-আপ সময়কালও নেই। অর্থাৎ এই পদ্ধতিতে বিদ্যমান বিনিয়োগকারী এবং শেয়ার হোল্ডাররা সরাসরি জনগনের কাছে তাদের শেয়ার বিক্রয় করতে পারে। সাধারনত ক্ষুদ্র ও মাঝারি সংস্থা, সরকারী প্রতিষ্ঠাণ গুলো এই উপায় অবলম্বন করে থাকে। ডিরেক্ট লিস্টিং বিধিমালা,২০১৫ অনুসারে এই পদ্ধতিতে বিনিয়োগকারীদের নিকট শেয়ার ইস্যু করতে হলে ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠানকে নিম্নলিখিত শর্তগুলো পুরণ করতে হবে-
- কোম্পানির বিদ্যমান পরিশোধিত মুল্ধন বা পেইড আপ ক্যাপিটালের পরিমাণ ৩০ কোটি বা তার বেশী হতে হবে
- আবেদনের পূর্বে কোম্পানির কোনো প্রকার অপরিশোধিত আর্থিক ক্ষতি নেই এই বিষয়ে স্বীকৃতি প্রদান করতে হবে
- কোম্পানিটি কমপক্ষে ৫ বছর যাবত তার বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে তা নিশ্চিত করতে হবে;
- নিয়মিত বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আয়োজন করতে হবে
- কোম্পানিটিকে বাণিজ্যিক কার্যক্রমের ৫ বছরের মধ্যে সাম্প্রতিক ৩ বছরে নিট মুনাফা অর্জন করতে হবে এবং প্রবৃদ্ধির হার স্বাভাবিক হতে হবে
- পূর্ববর্তী ২ (দুই) বছরের মধ্যে মূলধন (বোনাস ইস্যু বাদে) সংগ্রহ করেনি তা নিশ্চিত করতে হবে;
- শেয়ার ইস্যুর আবেদন জমা দেওয়ার পূর্ববর্তী 2 (দুই) বছরের মধ্যে বোনাস ইস্যু ব্যতীত অন্য কোনও উপায়ে একই শ্রেণীর সিকিওরিটি জারি করেনি এই বিষয়ে স্বীকৃতি প্রদান করতে হবে;
- সর্বশেষ ৩ টি আর্থিক বছরের জন্য ইস্যুকারী কোম্পানির প্রতিটি অর্থ বছরে চলতি সম্পদের পরিমাণ চলতি দায়ের তুলনায় বেশি ছিল এই মরমে প্রমান দাখিল করতে হবে
- সাম্প্রতিক ৩ বছরে ইতিবাচক নিট অপারেটিং নগদ প্রবাহ অর্জন করতে হবে
- কোম্পানি কমিশন কর্তৃক প্রকাশিত কর্পোরেট গভর্নেন্স গাইডলাইনগুলির বিধানগুলি অনুসরণ করে এই বিষয়ে স্বীকৃতি প্রদান করতে হবে
- কোম্পানির কোনো স্পনসার বা ডিরেক্টর ঋণ খেলাপি হতে পারবে না
- সিকিউরিটি এন্ড এক্সচেঞ্জ আইন,১৯৮৭ এবং IFRS /IAS স্ট্যান্ডার্ড অনুসারে আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করতে হবে এবং বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অব অডিটিং , কোম্পানি আইন ১৯৯৪ অনুযায়ী অডিট সম্পন্ন করতে হবে।
আজকের আমরা শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্তির বিভিন্ন প্রক্রিয়া এবং এই সকল প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে একজন ইস্যুকারীর কি কি যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন তা সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম। পরবর্তী ব্লগে শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্তির উপায়গুলো আমরা ধাপে ধাপে আলোচনা করব।