শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এর মৌলিক বিষয়গুলো সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শেয়ারবাজারে কিছু লোক ইনভেস্টরে পরিণত হন এবং অন্যরা ট্রেডিংয়ে মনোনিবেশ করেন। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা প্রায়ই ইনভেস্টিং এবং ট্রেডিংয়ের পার্থক্য সম্পর্কে বিভ্রান্তিতে থাকেন যা পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন।
শেয়ারবাজারে ট্রেডার এবং ইনভেস্টরের মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য হলো:
বিনিয়োগের সময়কাল: ট্রেডাররা মূলত স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য শেয়ার কিনে থাকেন এবং নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জন করার জন্য ঘন ঘন শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করেন। অন্যদিকে একজন ইনভেস্টর দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের দিকে অধিক গুরুত্ব দেন। তারা মূলধনী লাভের আশায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তাদের বিনিয়োগকৃত শেয়ার ধরে রাখেন।
ঝুঁকি গ্রহণের প্রবনতা: একজন ট্রেডার স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগকারী হওয়ায় প্রতিনিয়ত শেয়ারের দামের ওঠানামার কারণে উচ্চ ঝুঁকির সম্মুখীন হন। অন্যদিকে ইনভেস্টররা সাধারণত ঝুঁকি-বিমুখ হয়ে থাকেন। তারা দীর্ঘমেয়াদের জন্য শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেন, ফলে দৈনন্দিন বাজারের গতিবিধি সাধারণত তাদের বিনিয়োগ সিদ্ধান্তের উপর তেমন কোন প্রভাব ফেলতে পারে না।
পদ্ধতি: প্রতিনিয়ত শেয়ারের দামের ওঠানামার উপর ভিত্তি করে ট্রেডাররা শেয়ারবাজার থেকে মুনাফা করতে পারে। তাদের লক্ষ্য হলো কম দামে শেয়ার কিনে পরবর্তীতে দাম বাড়লে সেটি বিক্রি করা। তাই ট্রেডারদেরকে তাদের ট্রেড করার সর্বোত্তম সুযোগ চিহ্নিত করতে নিয়মিত বাজার পর্যবেক্ষণ করতে হয়। অন্যদিকে ইনভেস্টররা শেয়ারের মৌলিক উপাদানগুলোকে যথাযথভাবে বিশ্লেষণ করে দীর্ঘমেয়াদের জন্য তাতে বিনিয়োগ করেন। ইনভেস্টরদের লক্ষ্য হলো বিনিয়োগ থেকে দীর্ঘমেয়াদে সম্পদ সৃষ্টি।
মানসিকতা: ট্রেডাররা ব্যাপক গবেষণা করে অধিক ঝুঁকি নিয়ে একটি নির্দিষ্ট ট্রেডিং পরিকল্পনায় অটল থাকেন। যখন বাজারের অবস্থা তাদের লক্ষ্যের বিপরীতে চলে যায় তখন তারা তাদের ট্রেডিং পরিকল্পনায় সংশোধন করেন। অন্যদিকে একজন ইনভেস্টরকে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করার কারণে যথেষ্ট ধৈর্যশীল হতে হয়। ইনভেস্টররা সাধারণত ট্রেডারদের থেকে তুলনামূলকভাবে কম ঝুঁকির সম্মুখীন হন।
সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া: ট্রেডাররা মূলত প্রাইস চার্ট এবং অন্যান্য টুলস এর সাহায্যে টেকনিক্যাল এনালাইসিস করে তাদের ট্রেডিং সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। ট্রেডিংয়ের সর্বোত্তম সুযোগগুলোকে গ্রহণ করার জন্য ট্রেডারদের সাধারণত খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হয়। অন্যদিকে, শেয়ারে বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ইনভেস্টররা সাধারণত অনেক সময় নিয়ে থাকেন। তারা বিভিন্ন কোম্পানির মৌলিক বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করে তাদের বর্তমান আর্থিক অবস্থা, ভবিষ্যতে প্ৰবৃদ্ধির সম্ভাবনা, সম্ভাব্য ব্যবসায়িক ঝুঁকি এবং অন্যান্য কারণগুলো চিহ্নিত করে সিকিউরিজের মূল্যায়ন করে থাকেন এবং সেই অনুযায়ী তাদের বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
মূলধনের প্রয়োজনীয়তা: ট্রেডারদেরকে যথেষ্ট মুনাফা অর্জনের জন্য ঘন ঘন শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করতে হয়। তাই তাদের একাউন্টে সবসময় পর্যাপ্ত তহবিল থাকা জরুরি। তারা অনেকসময় ব্রোকারের থেকে মার্জিন লোনও গ্রহণ করে থাকেন। অন্যদিকে, ইনভেস্টররা সাধারণত নিজ তহবিল থেকেই বিনিয়োগ করে থাকেন। যেহেতু তারা দীর্ঘ সময়ের জন্য তাদের বিনিয়োগে অটল থাকেন, তাই তাদের একাউন্টে সবসময় প্রচুর পরিমানে ফ্রি-ফান্ড থাকার দরকার হয় না।
বিনিয়োগ এবং ট্রেডিংয়ের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হল বিনিয়োগের সময়কাল, পদ্ধতি, ঝুঁকিগ্রহনের প্রবনতা। আপনি একজন ইনভেস্টর হবেন নাকি ট্রেডার হবেন তা নির্ভর করবে আপনার আর্থিক চাহিদা এবং বিনিয়োগের লক্ষ্যের উপর। ইনভেস্টিং দীর্ঘমেয়াদী এবং এতে কম ঝুঁকি জড়িত, অন্যদিকে ট্রেডিং স্বল্পমেয়াদী এবং উচ্চ ঝুঁকি জড়িত। যথাযথ কৌশল অবলম্বন করলে উভয় পন্থা থেকেই মুনাফা অর্জন করা সম্ভব। কিন্তু আপনি যদি শেয়ারবাজারে নতুন হয়ে থাকেন, তবে আপনার জন্য কম ঝুঁকি নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগে মনোযোগ দেয়াই শ্রেয়।