How to choose a reliable stock – কীভাবে শেয়ার ক্রয়ের ক্ষেত্রে একটি নির্ভরযোগ্য স্টক নির্বাচন করব?
আপনি যদি সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন যে আপনি আপনার সঞ্চিত অর্থ শেয়ারে বিনিয়োগ করবেন তবে সেক্ষেত্রে আপনাকে একটি নির্ভরযোগ্য স্টক নির্বাচন করতে হবে। আপনার মূল লক্ষ্য হল একটি মানসম্মত ও লাভজনক স্টক খুঁজে বের করা যা আপনাকে দীর্ঘমেয়াদে মুনাফা ভোগ করার সুযোগ দিবে। শেয়ারে বিনিয়োগ একটি সাধারণ লেনদেন বা ক্রয়-বিক্রয় নয়। শেয়ার ক্রয়ের মাধ্যমে আপনি একটি কোম্পানির শেয়ারের মালিকানা লাভ করেন এবং ঐ কোম্পানির পরিচালন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ভোট করার অধিকার পেয়ে থাকেন। তাই যেকোন কোম্পানির শেয়ারে আপনার সম্পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপনের আগে স্টকটির কার্যকারিতা এবং লাভজনকতা যাচাইয়ের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করা অত্যন্ত জরুরি।
আপনার কষ্টে অর্জিত অর্থ যেকোনো কোম্পানির স্টকে বিনিয়োগের আগে গুরুত্বপূর্ণ সাতটি বিষয় সম্পর্কে আপনার অবশ্যই জানা উচিত সেগুলো হলঃ
- কোম্পানির আয় প্রবৃদ্ধি
- প্রতিযোগী কোম্পানিগুলোর তুলনায় টিকে থাকার ক্ষমতা
- ঋণ অনুপাত (Debt-to-Equity ratio)
- মূল্য–আয় অনুপাত (Price-Earnings ratio বা P/E ratio)
- কোম্পানিটির লভ্যাংশ বণ্টন পদ্ধতি
- দক্ষ পরিচালনা পর্ষদ
- দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকার মত ক্ষমতা ও স্থিতিশীলতা
কোম্পানির আয় প্রবৃদ্ধি
কোনো কোম্পানির আর্থিক অবস্থা বিশ্লেষণের জন্য কোম্পানিটির আয়ের হার যাচাই করা অত্যন্ত জরুরি। সময়ের সাথে কোম্পানির আয়ের হার বৃদ্ধি পাওয়া এটাই নির্দেশ করে যে কোম্পানিটি তার আর্থিক লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য সঠিকভাবে পরিকল্পনা অনুযায়ী তার কার্যক্রম সম্পাদন করছে। এমনকি দীর্ঘসময়ে স্বল্পমাত্রায় নিয়মিত প্রবৃদ্ধিও একটি কোম্পানির কার্যক্রম সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা প্রকাশ করে। সাধারণত কোনো কোম্পানির ৫ বছরের নগদ প্রবাহ, ব্যয় বিবরণী, পণ্য ও সেবার চাহিদা ইত্যাদি পর্যালোচনা করলেই কোম্পানিটি সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যায়।
প্রতিযোগী কোম্পানিগুলোর তুলনায় টিকে থাকার ক্ষমতা
বিনিয়োগের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য স্টক খুঁজে বের করার সিদ্ধান্তটি আপনি একটি শিল্পখাতের উপর ভিত্তি করে নিতে পারেন। এর জন্য এমন একটি শিল্পখাতকে নির্বাচন করুন যার ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা বাজারে অবস্থিত অন্যান্য শিল্পখাতের তুলনায় বেশি। এরপর সেই শিল্পখাত থেকে এমন একটি কোম্পানি নির্বাচন করুন যার প্রতিযোগী কোম্পানিগুলোর তুলনায় মুনাফা অর্জনের মাধ্যমে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার সম্ভাবনা বেশি। এই নির্বাচন কাজটি সহজে করার জন্য কোম্পানির আয়-ব্যয় বিবরণী ও নগদ প্রবাহ বিবরণী পর্যালোচনা করুন। একটি যথাযথ মূল্যায়নের জন্য বাজার মূলধনের দিক থেকে আপনার পছন্দের কোম্পানিটির সাথে প্রতিযোগী কোম্পানিগুলোর বিগত কয়েক বছরের আর্থিক অবস্থার তুলনা করুন।
ঋণ অনুপাত (Debt-to-Equity ratio)
একটি কোম্পানির দীর্ঘমেয়াদি ঋণ পরিশোধের পরিমাপকে ঋণ অনুপাত বলা হয়। যেকোনো কোম্পানির আর্থিক অবস্থা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে ঋণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়। প্রতিটি কোম্পানিই তার ব্যবসায়িক কার্যক্রম সম্পাদনে প্রয়োজনীয় মূলধনের জন্য কম-বেশি ঋণ গ্রহণ করে থাকে। তবে অতিরিক্ত ঋণ গ্রহণ কোম্পানির জন্য একটি নেতিবাচক দিক। এই ঋণের অনুপাত নির্ণয়ের জন্য কোম্পানির মোট দায়কে মোট শেয়ারহোল্ডারের ইক্যুইটি দ্বারা ভাগ করা হয়।
একটি কোম্পানির ঋণ অনুপাত ০.৫ বা তার নিচে হলে তা এই নির্দেশ করে যে কোম্পানিটির ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে নুন্যতম ঝুঁকি বিদ্যমান। তাই শেয়ার ক্রয়ের ক্ষেত্রে সেসকল কোম্পানিকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত যাদের ঋণ অনুপাতের পরিমাণ ০.৫ বা তার নিচে।
এছাড়াও নূন্যতম ঋণ অনুপাতের পাশাপাশি কোম্পানিটি কোন শিল্পখাতের অধীনে কাজ করে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, নির্মাণশিল্পের ক্ষেত্রে ঋণ অনুপাতের পরিমাণ যত বেশি হবে কোম্পানির জন্য ততই ভালো।
মূল্য–আয় অনুপাত (Price-Earnings ratio বা P/E ratio)
মূল্য-আয় অনুপাত হল এমন একটি অনুপাত যা কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয়ের তুলনায় শেয়ারের বর্তমান মূল্য পরিমাপ করে। একটি কোম্পানির শেয়ারের মূল্য মূল্যায়নের ক্ষেত্রে মুল্য-আয় অনুপাত একটি অন্যতম সূচক হিসেবে কাজ করে। এই অনুপাতটি কোম্পানির শেয়ারের সঠিক মূল্য নির্ণয় করতে সাহায্য করে। এই অনুপাত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আপনি শেয়ারের অতি মূল্যায়ন বা অবমূল্যায়ন থেকে বিরত থাকতে পারেন। এটি নির্ণয়ের জন্য কোম্পানির শেয়ার মূল্যকে শেয়ার প্রতি আয় দ্বারা ভাগ করা হয়।
একটি কোম্পানির মূল্য-আয় অনুপাত অন্যান্য কোম্পানির তুলনায় যত বেশি হবে, শেয়ার ক্রয়ের ক্ষেত্রে সেই কোম্পানির স্টক তত বেশি প্রাধান্য পাবে।
কোম্পানিটির লভ্যাংশ বণ্টন পদ্ধতি
নিয়মিত লভ্যাংশ প্রদান একটি কোম্পানির স্থিতিশীলতার নির্দেশক। সময়ের সাথে স্বল্প কিন্তু নিয়মিত হারে লভ্যাংশের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানির জন্য একটি ভালো লক্ষণ। তবে তা হঠাৎ করে আকস্মিক হারে বৃদ্ধি পেলে বুঝতে হবে যে কোম্পানিটি তার আয়ের অংশ পরিচালন বা অন্য খাতে পুনরায় বিনিয়োগ করছে না। আবার লভাংশের পরিমাণ হ্রাস পাওয়ার অর্থ এমন হতে পারে যে কোম্পানিটি কোনো ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে এবং পরিস্থিতি মোকাবিলায় লভাংশের অর্থ ব্যবহার করছে। তবে যদি কোম্পানির লভাংশের পরিমাণ একটি দীর্ঘ সময় ব্যাপী হ্রাস পেতে থাকে তবে বুঝতে হবে কোম্পানিটি সম্ভবত ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে এবং ভবিষ্যতে কোম্পানিটির পক্ষে তা মোকাবিলা করার সম্ভাবনা কম। সাধারণত বিগত ৫ বছরের লভ্যাংশের হার পর্যবেক্ষণ করলেই কোম্পানির অবস্থা সম্পর্কে একটি আনুমানিক ধারণা পাওয়া যায়।
দক্ষ পরিচালনা পর্ষদ
একটি দক্ষ পরিচালনা পর্ষদ একটি কোম্পানিকে দ্রততম সময়ে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে এবং প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করে। একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ পরিচালক তার নেতৃত্বের মাধ্যমে কোম্পানিতে একটি সুস্থ ও বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ তৈরির পাশাপাশি কোম্পানির মুনাফা পুনরায় বিনিয়োগের মাধ্যমে কোম্পানিকে প্রতিযোগিতায় দীর্ঘস্থায়ীভাবে টিকিয়ে রাখতে পারে। এর কারণেই দক্ষ ও অভিজ্ঞ ম্যানেজারদের দ্বারা পরিচালিত কোম্পানির শেয়ার বিনিয়োগকারীদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয়। পরিচালনের দিক থেকে একটি কোম্পানির কার্যকারিতা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা মূল্যায়নের জন্য একজন বিনিয়োগকারীকে
কোম্পানিটির গুনগত দিকগুলো (কোম্পানির ঐতিহ্য, কর্মচারী ও কাস্টমারের সন্তুষ্টি, একটি ব্রান্ড হিসেবে পণ্যের চাহিদা ও স্বীকৃতি ইত্যাদি) এবং পরিমাণগত দিকগুলো (আয় প্রবৃদ্ধি, মুনাফা, নগদ প্রবাহ, ঋণের পরিমাণ ইত্যাদি) ভালোভাবে নিরীক্ষা করতে হবে।
দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকার মত ক্ষমতা ও স্থিতিশীলতা
শেয়ার বাজারের সার্বিক অবস্থা প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। এক পর্যায় একটি কোম্পানির শেয়ারের মূল্য বৃদ্ধি পেতে পারে আবার পরবর্তী পর্যায়ই তা হ্রাস পেতে পারে। তবে শেয়ার ক্রয়ের ক্ষেত্রে যা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হল দীর্ঘমেয়াদে কোম্পানিটি কতটুকু স্থিতিশীল। সাধারণত একটি স্থিতিশীল কোম্পানির ট্রেড লাইন ঊর্ধ্বমুখী হয়ে থাকে। শেয়ার ক্রয়ের ক্ষেত্রে একটি কোম্পানি কতটুকু স্থিতিশীল তা মূল্যায়নের জন্য একজন বিনিয়োগকারীর উক্ত কোম্পানির বিগত ৫ বছরের আয়ের প্রবৃদ্ধি, মুনাফার হার, ঋণের পরিমাণ ইত্যাদি যাচাই করতে পারেন।
এছাড়াও শেয়ার ক্রয়ের ক্ষেত্রে একজন বিনিয়োগকারীর কিছু বিষয়ে এড়িয়ে চলা উচিতঃ
দ্রুত বর্ধনশীল কোম্পানি
একটি কোম্পানির খুব সময়ে অধিক মুনাফা অর্জন করা সব ক্ষেত্রেই একটি ইতিবাচক দিক নয়। তাই শেয়ার ক্রয়ের ক্ষেত্রে শুধু মাত্র প্রবৃদ্ধিকে মাথায় না রেখে শেয়ার সম্পর্কে ভালভাবে জেনে নিতে হবে।
আইপিও
আইপিও বা ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিং এর মাধ্যমে একটি কোম্পানি জনসাধারণকে শেয়ার ক্রয়ের অনুমতি দেয় এবং প্রাইভেট কোম্পানি থেকে পাবলিক কোম্পানিতে পরিণত হয়। এসকল নতুন পাবলিক কোম্পানি এর আর্থিক অবস্থা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরিবর্তনশীল। তাই অনভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীদের জন্য এই কোম্পানি গুলোর শেয়ারে বিনিয়োগ না করাই ভালো।
যেসকল ব্যবসায় সম্পর্কে আপনি অবগত নন
কিছু কিছু কোম্পানি রয়েছে যাদের পরিচালন প্রক্রিয়া বা ব্যবসায়িক কার্যক্রম সাধারণ মানুষ এবং নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য বুঝতে পারা কিছুটা কষ্টকর। তাই নতুন বিনিয়োগকারীদের না জেনে, না বুঝে এসকল কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ না করাই উত্তম।
একজন বিনিয়োগকারী তার কষ্টে অর্জিত অর্থ একটি নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য খাতে বিনিয়োগ করতে চান। শেয়ার বা স্টক এ বিনিয়োগ এমন একটি বিনিয়োগ খাত যা আপনাকে দীর্ঘসময় ব্যাপী একটি কোম্পানির অর্জিত মুনাফা ভোগ করার সুযোগ দেয়। অতএব, শেয়ারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আপনি কোন কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করছেন তা অবশ্যই ভালভাবে যাচাই করে নিতে হবে। আর একজন নতুন বিনিয়োগকারীর জন্য এই যাচাইয়ের কাজটি তুলনামূলক কঠিন। উপরের বিষয়গুলো পর্যালোচনার মাধ্যমে আপনি একজন নতুন বিনিয়োগকারী হিসেবে এই কাজটি খুব সহজেই করতে পারবেন। এতে করে আপনার সঞ্চিত অর্থ শেয়ারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে একটি নির্ভরযোগ্য সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।