37°C°F Precipitation: 0% Humidity: 44% Wind: 10 km/h
Friday 13th September 2024
বিনিয়োগের ক্ষেত্রে শেয়ার এবং বন্ডের মধ্যে পার্থক্য কি?
By Tasniya Jahan

বিনিয়োগের ক্ষেত্রে শেয়ার এবং বন্ডের মধ্যে পার্থক্য কি?

শেয়ার বাজারে সবচেয়ে জনপ্রিয় দুইটি বিনিয়োগ মাধ্যম হলো- শেয়ার এবং বন্ড। অধিকাংশ বিনিয়োগকারীর পোর্টফলিওতে আমরা এই দুইটি উপাদান দেখতে পাই। মিউচুয়াল ফান্ড গঠনের ক্ষেত্রেও শেয়ার এবং বন্ডকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়।

অধিকাংশ নতুন বিনিয়োগকারীর মনে প্রথমেই যে প্রশ্নগুলো আসে তা হলো-

– শেয়ার এবং বন্ডের মধ্যে পার্থক্য কি?

– এদের সামঞ্জস্য গুলো কোথায়?

– বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোনটিতে বিনিয়োগ করলে ভালো হবে?

আজকে আমরা এগুলো নিয়েই আলোচনা করব।

বিনিয়োগের জন্য শেয়ার এবং বন্ড উভয়েরই কিছু ভিন্নধর্মী দিক রয়েছে। তবে কোনটিতে বিনিয়োগ করা উচিত এই প্রশ্নের উত্তরটি পেতে হলে শুধুমাত্র শেয়ার ও বন্ডের ভিন্নধর্মী দিকগুলো সম্পর্কে জানাই যথেষ্ট নয়।

তা হলে প্রশ্ন হলো, আমরা কীভাবে জানব কোনটিতে বিনিয়োগ করা উচিত?

শেয়ার এবং বন্ডঃ মূল পার্থক্য

যখন কোনো বিনিয়োগকারী শেয়ারে বিনিয়োগ করে, তাকে ঐ নির্দিষ্ট কোম্পানির মালিকানার অংশীদার হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি কোম্পানিটিকে ইক্যুইটি মূলধন প্রদানের মাধ্যমে মালিকানার অংশীদারিত্ব লাভ করেন। কিন্তু যখন বন্ডে বিনিয়োগ করা হয়, এর অর্থ এই দাঁড়ায় যে বিনিয়োগকারী ইস্যুকারী কোম্পানিকে ঋণ প্রদান করছেন।

শেয়ার এবং বন্ডের মূল পার্থক্যেটি হলো- বিনিয়োগকারী কীভাবে শেয়ার ও বন্ডে বিনিয়োগের মাধ্যমে লাভবান হয়?

একজন শেয়ারহোল্ডার তখনই লাভবান হন, যখন কোম্পানিটি আর্থিক ভাবে লাভবান হয় এবং লভ্যাংশ ঘোষণা করে। অন্যদিকে, একজন বিনিয়োগকারী যিনি বন্ডে বিনিয়োগ করেছেন, তাকে বন্ড ইস্যুকারী কোম্পানি নিয়মিত হারে ইন্টারেস্ট বা সুদ প্রদান করে থাকে।

আপনার বিনিয়োগের লক্ষ্য

শেয়ার এবং বন্ডের মূল পার্থক্যের উপর ভিত্তি করে আমরা বলতে পারি যে, আপনি যদি দীর্ঘমেয়াদে  একটি ভালো এবং সমৃদ্ধ পোর্টফলিও তৈরির লক্ষ্যে বিনিয়োগ করতে চান, সেক্ষেত্রে আপনার শেয়ারে বিনিয়োগ করা উচিত।  তবে আপনি যদি নিয়মিত আয়ের লক্ষ্যে বিনিয়োগ করতে চান, তবে বন্ডে বিনিয়োগের মাধ্যমে আপনি বেশী উপকৃত হবেন।

Investment Goal

শেয়ারে বিনিয়োগের মাধ্যমে একজন বিনিয়োগকারী তুলনামূলক ভাবে অধিক মুনাফা অর্জন করতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে তাকে সতর্কতা ও বিচক্ষণতা অবলম্বন করতে হবে। এছাড়াও নানাবিধ খাতে বিনিয়োগ করতে হবে, যেন কোনো একটি শেয়ার ক্ষতির সম্মুখীন হলে, অন্যান্য শেয়ারে অর্জিত মুনাফা দ্বারা তা পুষিয়ে নেয়া যায়।

অন্যদিকে, বন্ড থেকে একজন বিনিয়োগকারী নিয়মিত হারে নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর ইন্টারেস্ট বা সুদ পেয়ে থাকেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বছরে দুই বার, আবার কখনো কখনো তিন মাস পর পর।

শেয়ারে বিনিয়োগ করলে কোম্পানি প্রদত্ত লভ্যাংশ থেকে বিনিয়োগকারী লাভ করতে পারবে কিনা বা পারলেও, কবে বা কোন সময়ে লভ্যাংশ ঘোষণা করা হবে এই বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা থাকে না।

 

শেয়ার বন্ড
শেয়ারে বিনিয়োগের মাধ্যমে বিনিয়োগকারী মালিকানার অংশীদারিত্ব লাভ করেন। বন্ড হচ্ছে একটি ঋণপত্র যার মাধ্যমে কোম্পানিগুলো বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করে থাকে।
এক্ষেত্রে বিনিয়োগের মূল উদ্দেশ্য থাকে- মূলধনী মুনাফা ও লভ্যাংশ বন্ডে বিনিয়োগের মাধ্যমে বিনিয়োগকারী নির্দিষ্ট হারে নির্ধারিত সময় পর পর সুদ বা ইন্টারেস্ট পেয়ে থাকে।
শেয়ারের কোনো নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে না বন্ডের একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে
কোম্পানির অবলোপনের ক্ষেত্রে পাওনা পরিশোধের সময় শেয়ার হোল্ডারদের সবার শেষে বিবেচনা করা হয়। কোম্পানির অবলোপনের ক্ষেত্রে পাওনা পরিশোধের সময় বন্ডহোল্ডারদেরকে শেয়ারহোল্ডারদের আগে অগ্রাধিকার দেয়া হয়।
শেয়ারে মুনাফা ও ঝুঁকির পরিমাণ বেশী থাকে বন্ডের ক্ষেত্রে মুনাফার হার নির্দিষ্ট থাকে এবং ঝুঁকির পরিমাণ কম থাকে।
শেয়ার মূল্যস্ফীতির বিপক্ষে বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগকৃত সম্পদকে সুরক্ষা প্রদান করে বন্ডে বিনিয়োগকৃত সম্পদের ওপর মুল্যস্ফীতির প্রভাব পড়ে।

 

বিনিয়োগকারী হিসেবে আপনি কতটুকু ঝুঁকি গ্রহণ করতে চান?

শেয়ার বা বন্ডে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আপনার আকাঙ্ক্ষিত ঝুঁকির মাত্রা ঘনিষ্টভাবে জড়িত।

স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে, কোন বিনিয়োগকারী যদি বন্ডে তার সঞ্চিত অর্থ পূর্ণ মেয়াদ পর্যন্ত বিনিয়োগ করেন সেক্ষেত্রে বন্ডের বাজারমূল্য পরিবর্তন বিনিয়োগকারীর জন্য কোন বিবেচ্য বিষয় নয়। অর্থাৎ আপনি যদি কোনো কোম্পানির বন্ডে ১, ০০,০০০ টাকা ৭ বছরের জন্য বিনিয়োগ করেন, তবে ৭ বছর অতিবাহিত হওয়ার পর আপনি ১,০০,০০০ টাকা পেয়ে যাবেন।

তবে শেয়ারের ক্ষেত্রে শেয়ারের মূল্য বাড়তেও পারে আবার কমেও যেতে পারে। অর্থাৎ আপনি যদি ১,০০,০০০ টাকার শেয়ার ক্রয় করেন এবং ৭ বছর পরে তা বিক্রয় করেন সেক্ষেত্রে শেয়ারের বিক্রয়মূল্য প্রাথমিক বিনিয়োগের তুলনায় কম হতে পারে আবার বিনিয়োগকারীর আশানুযায়ী বেড়ে যেতে পারে।

এই সকল কারণে ঝুঁকি গ্রহণ করতে অনিচ্ছুক বিনিয়োগকারীরা সাধারণত বন্ডে বিনিয়োগ করে থাকেন। অন্যদিকে যারা ঝুঁকি নিতে পছন্দ করেন তারা শেয়ারে বিনিয়োগ করে থাকেন।

 

শেয়ার ও বন্ডে একত্রে বিনিয়োগ করা তুলনামূলকভাবে ভালো

একজন বিনিয়োগকারী চাইলে যে কোনো একটি নির্বাচনের পরিবর্তে, তার পোর্টফলিওতে শেয়ার এবং বন্ড দুটোকেই রাখতে পারেন।

Portfolio Management

যারা অধিক মুনাফায় লাভ করতে চান, তারা এভাবে শেয়ারে বিনিয়োগ করতে পারেন। আপনার ঝুঁকির ভারসাম্য বজায় রাখতে পোর্টফলিওয়ের কিছু শতাংশ বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন কারণ বাজারে  শেয়ারের মূল্য হ্রাস পেলে, বন্ডের মত ঝুঁকিহীন নিরাপদ সম্পদের মূল্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে বৃদ্ধি পায়।

এদিকে, ঝুঁকি গ্রহণে অনিচ্ছুক বিনিয়োগকারীরা তাদের একটি অংশ শেয়ারে বিনিয়োগ  করতে পারেন যা তাদের বিনিয়োগকে মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে নিরাপত্তা প্রদান করতে পারবে। কারণ, বন্ড সাধারণত নির্দিষ্ট হারে সুদ দিয়ে থাকে। ফলে বেড়ে যাওয়া মুল্যস্ফীতির কারণে বিনিয়োগ হতে প্রাপ্ত আয়ের মূল্য হ্রাস পায়। শেয়ার আপনার বিনিয়োগের আর্থিক মুল্যকে মূল্যস্ফীতি থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করবে কারণ শেয়ারের মূল্য প্রায়ই মূল্যস্ফীতির চেয়ে দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পায়।

সংক্ষেপে, শেয়ারে বিনিয়োগের মাধ্যমে আপনি মূল্যস্ফীতির প্রভাবকে কাটিয়ে উঠতে পারবেন। অন্যদিকে বন্ডে বিনিয়োগের মাধ্যমে শেয়ার বাজারের সম্ভাব্য ক্ষতি মোকাবেলায় একটি নির্ভরযোগ্য নিরাপত্তা বলয় তৈরী করতে পারবেন।

সুতরাং, শেয়ার এবং বন্ডের উভয় খাতে বিনিয়োগ, বিনিয়োগকারীদের সর্বাধিক লাভ এবং ঝুঁকি হ্রাস করতে সহায়তা করে থাকে।

  • 2 Comments
  • August 3, 2020

Comments

  1. Rakibul
    August 24, 2020

    Well explained. Keep it up good work that can attract new investor.

    1. admin
      September 10, 2020

      thanks

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *