ঋণ মূলধন (Debt Capital) ও ইক্যুইটি মূলধনের (Equity Capital) পার্থক্য
প্রতিটি ব্যবসায় পরিচালনার জন্য মূলধন প্রয়োজন। মূলধন বলতে সেই অর্থকে বোঝায় যা যেকোনো ব্যবসায়ের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিনিয়োগ করা হয়। এই মূলধনের অর্থ বিভিন্ন খাতে উৎপাদন ও গবেষণায়, ঋণ পরিশোধের মত নানা কাজে ব্যয় করা হয়।
সাধারণত ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলো দুই ধরণের মূলধনের উপর নির্ভর করে, ঋণ মূলধন এবং ইক্যুইটি মূলধন। উভয়ই একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে টিকে থাকতে সহায়তা করলেও, উভয়ের মধ্যে কিছু পার্থক্য বিদ্যমান। তবে উভয় প্রকার মূলধন ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে।
নিম্নে ঋণ মূলধন ও ইক্যুইটি মূলধনের পার্থক্যগুলো বিস্তারিত আলোচনা করা হলঃ
ঋণ মূলধন
ঋণ মূলধন বলতে এমন মূলধনকে বোঝায় যা আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি উৎস হতে একটি নির্দিষ্ট সময়ে ফেরত দেওয়ার শর্তে ঋণ নেওয়া হয়। এই ঋণ স্বল্পমেয়াদী বা দীর্ঘমেয়াদী উভয়ই হতে পারে। গৃহীত ঋণের বিপরীতে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানটিকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সুদ প্রদান করতে হয়। এর ফলে ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে কখনো কখনো জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়, বিশেষত যখন সুদের হার অনেক বেশি হয়ে থাকে। একটি কোম্পানিকে আইনতভাবে এর শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ বণ্টনের পূর্বে ঋণের সুদ পরিশোধ করতে হয়। যার ফলে বার্ষিক আয় বণ্টনের ক্ষেত্রে ঋণ মূলধন পরিশোধ সর্বাপেক্ষা প্রাধান্য পেয়ে থাকে।
ঋণ একটি কোম্পানিকে স্বল্প বা অধিক যেকোনো পরিমানে অর্থ উত্তোলনের সুবিধা দিয়ে থাকলেও ঋণদাতা ঋণের বিনিময়ে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সুদ দাবি করেন। এই সুদের হারকে ঋণের ব্যয় বলা হয়। একটি আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির জন্য ঋণ মূলধন সংগ্রহ করা একটি কষ্টকর বিষয়। কারণ এক্ষেত্রে কোম্পানিটি নির্দিষ্ট সময়ে সুদসহ ঋণের অর্থ পরিশোধ করতে সক্ষম হবে কিনা ষে বিষয়ে ঋণদাতাদের মধ্যে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি একটি কোম্পানি ১,০০,০০০ টাকা ঋণ নিয়ে থাকে যার সুদের হার ৭% তবে এই ৭% সুদকেই ঋণের ব্যয় হিসেবে ধরা হয়। যেহেতু ঋণের ব্যয় কর বাদযোগ্য, তাই প্রকৃত ঋণের ব্যয় নির্ণয়ের জন্য কোম্পানিগুলো সুদের হারে সাথে কর্পোরেট করের বিপরীত মানের সাথে গুণ করা হয়। যদি কর্পোরেট করের হার ৩০% হয় তবে উপরোক্ত উদাহরণ অনুযায়ী ঋণের ব্যয়ের পরিমাণ হবে ০.০৭Í(১-০.৩) বা ৪.৯%।
ইক্যুইটি মূলধন
ইক্যুইটি মূলধন সাধারণত শেয়ারহোল্ডারদের কর্তৃক শেয়ারে বিনিয়োজিত অর্থ থেকে সংগ্রহ করা হয়। ইক্যুইটি মূলধনের ব্যয় নির্ণয় করা তুলনামূলক কঠিন। ইক্যুইটি মূলধন ঋণ মূলধনের মত নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরিশোধ করার প্রয়োজন হয় না। তবে শেয়ার বাজারে শেয়ারে পারফর্মেন্স ও শেয়ারে মূল্যের ওঠা-নামার উপর ভিত্তি করে শেয়ারহোল্ডাররা তাদের বিনিয়োগের জন্য মুনাফার একটি অংশ পেয়ে থাকেন। বিনিয়োগকারীরা যাতে কোম্পানিগুলোর শেয়ারে নিয়মিত বিনিয়োগ করে সেজন্য কোম্পানিগুলোতে শেয়ার মূল্যের যথাযথ মূল্যায়ন ও লভ্যাংশ প্রদানের মাধ্যমে নিয়মিত আয় নিশ্চিত করতে হবে। প্রত্যাশিত আয়ের হার বা ইক্যুইটি মূলধনের ব্যয় নির্ণয়ের জন্য ক্যাপিটাল এসেট প্রাইজিং মডেল (CAPM) ব্যবহার করা হয় যা সামগ্রিক বাজারের রিস্ক প্রিমিয়াম ও কোম্পানির শেয়ারের বেটা ভাল্যুকে মূল্যায়ন করে।
সাধারণত, ইক্যুইটি মূলধনের ব্যয় ঋণ মূলধনের ব্যয়ের তুলানায় বেশি হয়ে থাকে। শেয়ারহোল্ডারদের ঝুঁকির পরিমাণ ঋণদাতাদের ঝুঁকির তুলনায় বেশি কারণ এটি ইক্যুইটিয়ের মত কোম্পানির আয়ের উপর নির্ভর করে না।
ইক্যুইটি তিন ধরনের হতে পারেঃ
- সাধারণ শেয়ার- কোম্পানি সাধারণত মূলধন সংগ্রহের জন্য বিনিয়োগকারীদের নিকট সাধারণ শেয়ার বিক্রয় করে। সাধারণ শেয়ার ক্রয়ের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির বিভিন্ন বিষয়ে ভোটাধিকার পান।
- অগ্রাধিকার শেয়ার- এই শেয়ার ক্রয়ের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা ভোটাধিকার না পেলেও কোম্পানির মালিকানাস্বত্ব পেয়ে থাকেন। কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের পূর্বে অগ্রাধিকার শেয়ারহোল্ডারদের প্রাপ্য পরিশোধ করা হয়।
- সংরক্ষিত আয়- কোম্পানির আয়ের যে পরিমাণ অংশ শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ হিসেবে প্রদান না করে ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার জন্য সংরক্ষন করা হয় তাকে সংরক্ষিত আয় বলে।
ইক্যুইটি মূলধন কোম্পানির ব্যালান্স শিটের শেয়ারহোল্ডারদের ইক্যুইটি হিসেবে দাখিল করা হয় এবং এক মালিকানা ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে ব্যালান্স শিটের মালিকানাস্বত্ব হিসেবে দাখিল করা হয়।