বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে কোভিড-১৯ এর প্রভাব
বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে কোভিড-১৯ এর প্রভাবঃ
কি হতে পারে দেশের শেয়ার বাজারে
করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারীর কারনে সৃষ্ট স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির কারনে ২০২০ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ১% (আগের পূর্বাভাস ৮%) এ নেমে আসবে বলে বিশ্বব্যাংক ধারনা করছে।
এই মহামারী সুদূরপ্রসারি প্রভাব দেশের অর্থনীতির সকল স্তম্ভকেই নড়বড়ে করে দিতে শুরু করেছে; যার মধ্যে রয়েছে –জনস্বাস্থ্য নিরাপত্তা ও লকডাউনের কারনে দীর্ঘসময় উৎপাদনমূখী শিল্প বন্ধ থাকা, বিশ্ববাজারে বাংলাদেশী পণ্যের চাহিদা ও রফতানী কমে যাওয়া, ব্যাপক সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান সংকুচিত হওয়া, আভ্যন্তরীন বাজারে পণ্য ও সেবার চাহিদা ব্যাপক হারে কমে যাওয়া, এবং আর্থিকখাতে খেলাপী ঋণ বৃদ্ধি ও ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া।
সার্বিকভাবে বেশিরভাগ ছোট ও বড় কোম্পানীর ব্যবসায়িক কার্যক্রম কমে যাওয়ায় মুনাফার পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পাবে। উদাহরনস্বরূপ, দেশের SME খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কারণ এই খাত স্বল্প-মূলধন সম্পন্ন এবং টিকে থাকার জন্য নিয়মিত আয় ও নগদ প্রবাহের উপর নির্ভরশীল। এ কারনে, SME খাতে বড় অংকের ঋণ প্রদানকারী ব্যাংকগুলি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। এছাড়াও, রেমিট্যান্স, খেলাপীঋণ এবং রপ্তানি খাতে পতন ব্যাংকিং খাতের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। এসব ক্ষতি স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে শেয়ারবাজারে প্রভাব ফেলবে।
কোভিড-১৯ মহামারী এবং বাংলাদেশের শেয়ারবাজার
২০২০ সালের মার্চ মাসে করোনা ভাইরাস মহামারী ছড়িয়ে পরার পর থেকে দেশের শেয়ার বাজার দোদুল্যমান পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে চিত্র-১ থেকে আমরা উপলব্ধি করতে পারি । বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি এড়ানোর প্রবণতা এবং খুচরা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কোভিড আতঙ্কের ফলে বাজারে শেয়ার বিক্রয়ের চাপ (Sale pressure) বৃদ্ধির ফলে ২০২০ সালের জানুয়ারী থেকে মার্চ মাসে DSEX সূচক ১০% হ্রাস পায়। এ সময়ে জুড়ে বাজার ঝুঁকির হার ২.৩৯% ছিল, যা মূলত অধিক ঝুঁকি নির্দেশ করে। অন্যদিকে একই সময়ে মোট বাজার মূলধন ৮.৫% এবং লেনদেন ২৫.১% হ্রাস পেয়েছে।
চিত্র ১-DSEX সূচক ১০% হ্রাস পেয়েছে এবং বাজারে ঝুঁকির পরিমাণ ২.৩৯%
চিত্র ২: DSE এর বাজার মূলধন এবং লেনদেনের ধারাবাহিকতার একটি সার্বিক চিত্র
যেভাবে প্রভাবিত হতে পারে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার
শেয়ার বাজারে কোভিড-১৯ এর সার্বিক প্রভাব বাজারের দুটি প্রধান পক্ষ – বিনিয়োগকারী এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানী – এর প্রেক্ষিতে বিবেচনা করতে হবে, যা নিচে ব্যাখ্যা করা হল।
বিনিয়োগকারীর প্রতিক্রিয়া হতে সৃষ্ট প্রভাব
কোভিড-১৯ এর ফলে ইতিমধ্যে বিনিয়োগকারীদের একটি বড় অংশ তাদের ব্যয় হ্রাস করতে বাধ্য হয়েছে, বিশেষ করে মৌলিক চাহিদাগুলোর বাইরে সকল প্রকার ব্যয় হ্রাসের প্রবণতা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে লক্ষ্য করা গিয়েছে। দেশব্যাপী লকডাউনের কারণে বিনিয়োগকারীদের আয় এবং সঞ্চয় ব্যপকহারে হ্রাস পেয়েছে। ভোক্তাদের চাহিদা কমে যাওয়ায় দেশের অধিকাংশ শিল্প সাময়িক বা স্থায়ীভাবে তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রমের পরিসর কমিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছে। যার ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ হ্রাস, চাকরী থেকে ছাটাই, অপরিশোধিত বেতন ও ভাতা ইত্যাদি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ফলে স্বাভাবিক পরিস্থিতে বিনিয়োগকারীরা তাদের আয়ের যে সঞ্চিত অংশটি শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে থাকেন তা বর্তমান পরিস্থিতে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ না করে তারা তাদের দৈনন্দিন চাহিদা মেটানোর জন্য অথবা বিপদ মোকাবেলার জন্য সঞ্চয় করে রাখতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক ব্র্যাকের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, বাংলাদেশের প্রায় ৯৫ শতাংশ জনগণ কোভিড-১৯ এর কারণে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, আর ৫১ শতাংশ জনগণের উপার্জন হ্রাস পেয়ে শূন্যের কোঠায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে (ব্র্যাক, ২০২০)। লকডাউন এবং করোনা সংক্রমণের সময়কাল বৃদ্ধি দীর্ঘায়িত হওয়ার সাথে সাথে অধিকাংশ বিনিয়োগকারীরা তাদের আয় আরও হ্রাস পাবে বলে আশঙ্কা করছেন, কারণ চাকরির ঘাটতি এবং কর্মসংস্থান হ্রাস আগামী কয়েক মাস অব্যাহত থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ধারণা করা শেয়ার বাজারে সংখ্যাগরিষ্ঠ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী অংশগ্রহণ এবং নতুন বিনিয়োগকারিকারীদের কাছ থেকে বিনিয়োগের সম্ভাবনা শূন্যের কাছাকাছি। ভবিষ্যতের পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কারণ অনেক বিনিয়োগকারী তাদের সঞ্চিত বা বিনিয়োগকৃত অর্থ ব্যবহার করতে হবে (যেমন, ব্যাংকগুলি থেকে সঞ্চিত অর্থ উত্তোলন )।
পরিস্থিতি মোকাবেলা এবং বেঁচে থাকার তীব্র প্রচেষ্টায় শেয়ার বাজারে তাদের বর্তমানে বিনিয়োগকৃত অর্থ শেয়ারবাজার থেকে উত্তোলন করতে হবে যার ফলশ্রুতিতে শেয়ার বাজারে দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক ও আর্থিক সঙ্কট সৃষ্টি হতে পারে। অধিকাংশ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারদের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা, নিজস্ব লোন ও ক্রেডিট কার্ডের সুদ প্রদানের জন্য এবং হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়া পরিবারিক বা চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে শেয়ার বাজার থেকে তাদের পূর্বে বিনিয়োগকৃত শেয়ার বিক্রয় করে বাজার থেকে নগদ অর্থ তুলে নেওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
এছাড়াও যে সকল বিনিয়োগকারী এই মুহূর্তে তারল্য সংকটে ভুগছেন না তারাও ভবিষ্যতে তাদের বিনিয়োগকৃত শেয়ারের মূল্য আরও কমে যেতে পারে এই আশঙ্কা থেকে তাদের শেয়ারগুলোকে বর্তমান বাজারমূল্যে বিক্রয় করে তুলনামূলকভাবে কম ঝুঁকির বিনিয়োগ খাতে (যেমনঃ ব্যংকের আমানত হিসাব) বিনিয়োগ করাকেই শ্রেয় বলে বিবেচনা করছেন। তবে, ক্রমবর্ধমান খেলাপী ঋণ (এনপিএল) এবং ব্যাংকিং সেক্টরে তীব্র প্রতিযোগিতার কারণে অনেকে ব্যাংকিং খাতে বিনিয়োগ সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত নয় বলে মনে করেন যা বিনিয়োগকারীদের জন্য উদ্বেকের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনেকেই পরবর্তী বছরগুলিতে লিস্টেড কোম্পানিগুলোর আর্থিক অবস্থার উপর কোভিড-১৯ মহামারীর সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে ইতিমধ্যে উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করেছেন। কোম্পানিগুলর আয়, লাভ এবং নগদ প্রবাহের কমে যাওয়ার ফলাফলস্বরূপ শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারীদের সম্ভাব্য লভ্যাংশের হার আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পেতে পারে, বিশেষ করে তাদের জন্য যারা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করেছেন। অনেক কোম্পানিই তাদের নগদ প্রবাহএর সীমাবদ্ধতা মেটাতে নগদের পরিবর্তে অ-নগদ লভ্যাংশ (যেমন স্টক) দিতে পারে।
এছাড়াও, যেহেতু কোভিড-১৯ সমগ্র অর্থনীতি এবং আর্থিক বাজার জুড়ে এমন একটি জটিলতা সৃষ্টি করেছে, যার ফলে আশঙ্কা করা যায় যে শেয়ার বাজার কখনো তার পূর্বের রুপে ফিরে নাও যেতে পারে। এটি প্রাইস গেইন –এর আশায় থাকা বিনিয়োগকারীদের আয়কে হ্রাস করতে পারে, কারণ আগামী দিনগুলিতে বাজারে কম তরলতার সাথে বাজার আরও অস্থির হয়ে উঠতে পারে। এর ফলে ভবিষ্যতে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রয়জনিত লাভ আরও কমে যেতে পারে।
সরবরাহকারীদের প্রতিক্রিয়া হতে সৃষ্ট প্রভাব
কোভিড-১৯ এর প্রভাবে সরবরাহকারীদের প্রতিক্রিয়া ৪টি উপায়ে শেয়ার বাজারকে প্রভাবিত করতে পারে।
প্রথমত, শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর প্রস্তুতকৃত পণ্য ও সেবার চাহিদা হ্রাস পাওয়ায় অধিকাংশ শিল্পখাত তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম কমিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছে। কোম্পানিগুলোর মূলধন ঘাটতি ও আর্থিক ক্ষমতা কমে যাওয়ায় ফলে নতুন প্রকল্প আনয়নের পাশাপাশি, বর্তমান প্রকল্পগুলোর ব্যবস্থাপনা, পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের সাথে সম্পর্কিত বিনিয়োগগুলো উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যে গৃহীত দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের পরিকল্পনা বাতিল বা স্থগিত থাকার ফলে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ভবিষ্যত প্রবৃদ্ধি এবং ফাইনান্সিয়াল পারফর্মেন্স আরও খারাপের দিকে যেতে পারে।
দ্বিতীয়ত, নতুন কিংবা পুরাতন বিনিয়োগ পরিকল্পনা বাতিল করার ফলে নতুন IPO –এর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যেতে পারে। উপরন্তু দীর্ঘসময় ব্যবসায়িক মন্দার কারনে অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের অভাব দেখা দিতে পারে, IPO – ফলে এর সংখ্যা আরো কমে যেতে পারে।
তৃতীয়ত, স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়ানোর জন্য অনেক ব্যবসায় ও শিল্পে বাধ্যতামূলক বা সেচ্ছাকৃতভাবে তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম স্থগিত রাখতে পারে যার ফলে শিল্পখাতের আমদানি-রপ্তানি, উৎপাদন, আয়, মুনাকার হার এবং নগদ প্রবাহ যথেষ্ট পরিমাণে হ্রাস পাবে। বিশ্বব্যাপী শিল্পখাতগুলোর এরূপ প্রবণতা পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় যে, যে সকল খাত রপ্তানি আয় এবং আমদানিকৃত সামগ্রীর উপর নির্ভর করে তাদের অবস্থার অন্যান্য খাতের তুলনায় আরও শোচনীয়। এক্ষেত্রে, কোম্পানিগুলো বিনিয়োগকারীদের আস্থা বজায় রাখতে নগদ লভ্যাংশ প্রদান বন্ধ করে আরও বেশি অ-নগদ লভ্যাংশ প্রদান করতে পারে।
চতুর্থত, কিছু শিল্প (Non-Cyclical industries) যাদের উৎপাদিত পণ্যের (যেমনঃ খাবার, ফার্মাসিউটিক্যালস এবং উপযোগমূলক) চাহিদা মহামারিতে বেড়ে যায়, তারা ঋণ স্বল্পতার কারণে তাদের ব্যবসায় পরিচালনার প্রয়োজনীয় মূলধন সাপোর্ট দিতে অসুবিধার সম্মুখীন হতে পারে।
অন্যদিকে মহামারী প্রভাব থেকে বাঁচতে বিনিয়োগকারীদের দ্রুতগতিতে শেয়ার বিক্রয় (Liquidation) এবং আমানতকারীদের তহবিল প্রত্যাহারের হার বেড়ে যাওয়ার কারণে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তারল্য স্বল্পতার মুখোমুখি হতে পারে যার পরিপ্রেক্ষিতে পরিবর্তিতে ঋণের স্বল্পতা দেখা দিতে পারে। তবে, ঋণ স্বল্পতা শেয়ার বাজারের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ বিবেচনা করা যেতে পারে। যেহেতু কোম্পানিগুলি ব্যাংক এবং অন্যান্য নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণে অসুবিধার সম্মুখীন হলে, তাদের মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠান আইপিও এর মাধ্যমে শেয়ার বাজার থেকে মূলধন সংগ্রহের জন্য পদক্ষেপে গ্রহণ করতে পারে।
সেক্টর ভিত্তিক আলোচনা
কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাবে শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর প্রবৃদ্ধি এবং কার্যক্ষমতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। যার প্রতিফলনস্বরূপ শেয়ার বাজারে তাদের শেয়ারের বাজারমূল্য কমে যেতে পারে বলে ধারণা করা যায়। এতে আন্তর্জাতিক অর্থনীতির পাশাপাশি দেশীয় অর্থনীতির শিল্প ও বানিজ্য, পরিবহন ও রসদ সরবরাহ, ভারী উৎপাদন শিল্প ইত্যাদি খাত উল্লেখযোগ্য ভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। রিসার্চ এন্ড ইনোভেশন ল্যাবের একটি রিসার্চে পাওয়া গেছে (RIL, ২০২০) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ১৮টির মধ্যে ১৪টি সেক্টরের প্রবৃদ্ধির হার এবং কার্যক্ষমতা ইতিমধ্যে হ্রাস পেয়েছে, যার মধ্যে ৪টি সেক্টর কোভিড-১৯ মহামারীতে সৃষ্ট বাড়তি চাহিদার কারণে লাভবান হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত বেশকিছু সেক্টরভুক্ত কোম্পানীগুলো কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাবে ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে; এগুলো হলো- ফার্মাসিউটিক্যালস, খাবার ও অন্যান্য, তথ্য ও প্রযুক্তি। চলমান মহামারীর প্রভাবে দেশীয় এবং আন্ত্রজাতিক বাজারে ঔষধ এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষার সরঞ্জামের চাহিদা সৃষ্টি হওয়ায় ফার্মাসিউটিক্যাল সেক্টরে প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করা যেতে পারে। বেক্সিমকো ফার্মা এবং বেকন ফার্মা করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে আংশিকভাবে কার্যকরী একটি ঔষধ Remdesivir উৎপাদনে এগিয়ে রয়েছে, যা এর একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। লকডাউনের কারণে ভোক্তা পর্যায়ে এবং ব্যবসায় খাতে অনলাইন কার্যক্রম যেমনঃ অনলাইন শপিং, মিটিং, ওয়েবনার, পোডকাস্ট এবং ভিডিও গেমস ইত্যাদি চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
অন্যদিকে সিমেন্ট; ব্যাংক, বীমা, ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান; সেবা ও রিয়েল এস্টেট; টেক্সটাইল; ভ্রমণ এবং অবসর; ইঞ্জিনিয়ারিং; চামড়া; পাট; কাগজ ও মুদ্রণ শিল্প; এবং সিরামিক সেক্টরে ব্যবসায়িক মন্দা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ক্রমশ বৃদ্ধির কারণে পর্যটন, হোটেল ব্যবস্থাপনা, পরিবহন, গার্মেন্টস, ব্যাংকিং এবং ফিনান্সের মতো শিল্পগুলি তাদের ব্যবসায়ের প্রকৃতি এবং উপার্জনের প্রক্রিয়াগত কারণে অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এ ছাড়া ফার্মাসিউটিক্যালস, স্বাস্থ্যসেবা এবং সামাজিক সুরক্ষার মতো কয়েকটি শিল্প আর্থিকভাবে লাভবান হবে কারণ এই শিল্পগুলো মহামারী রোধ করার জন্য সর্বদা কাজ করে চলেছে। অবশিষ্ট শিল্পখাত গুলোর মধ্যে নন-সাইক্লিকাল শিল্প খাতের ব্যবসায়িক কার্যক্রম এবং প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে বলে ধরে নেয়া যায়, যেমনঃ খাদ্য। অন্যদিকে, বিদ্যুতের উৎপাদন ও চাহিদা লকডাউন দ্বারা সরাসরি খুব বেশি প্রভাবিত হয় না বিধায় ইউটিলিটি সেক্টরে ক্ষতির সম্ভাবনা কম, যদিও শিল্প জ্বালানীর চাহিদা কমায় কিছুটা ঋণাত্মক প্রভাব পড়তে পারে।
করোনা পরবর্তী সময়ে দেশের সাধারণ মানুষ এবং কর্পোরেশনগুলোর আর্থিক সক্ষমতা পরিস্থিতিতে আমূল পরিবর্তন আসতে পারে। আপাতদৃষ্টিতে আমরা শিল্পখাতগুলোর সম্ভাব্য পরিণতি সম্পর্কে ধারণা করতে পারলেও, পর্যাপ্ত পরিমাণ তথ্য ও উপাত্ত না থাকায় করোনা ভাইরাসের প্রভাবে তাদের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ যথাযথভাবে নির্ধারণ করা যথেষ্ট কষ্টসাধ্য।
কোভিড -১৯ মহামারীর কারণে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি তালিকাভুক্ত সংস্থাগুলির আর্থিক অবস্থার ওপর নির্ভরশীল । নিম্নলিখিত সারণি থেকে তালিকাভুক্ত সেক্টরগুলোর উপর করোনা ভাইরাস মহামারীর সম্ভাব্য প্রভাব তুলে করা হলো –
সারণী: DSE তালিকাভুক্ত শেয়ারের উপর কোভিড -১৯ এর সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব
সারণী: DSE তালিকাভুক্ত শেয়ারের উপর কোভিড -১৯ এর সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব
বিনিয়গকারীদের সুরক্ষা এবং এতদসংক্রান্ত নীতিমালা
সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, কোভিড-১৯ এর প্রভাবে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের পরিমাণ, শেয়ারের মূল্য, লেনদেনের পরিমাণ এবং তালিকাভুক্ত সংস্থাগুলির বাজার মূল্য হ্রাস পেতে পারে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ার ক্রয়ের চাহিদার তুলনায় ‘সেল’ প্রেশার বেশি হওয়ায় পরিপ্রেক্ষিতে শেয়ারের দাম এবং লেনদেনের পরিমাণের কমে যেতে পারে। মৌলভিত্তিক দৃষ্টিকোণ থেকে, রাজস্ব আয়, মুনাফার হার, নগদ প্রবাহ এবং ব্যবসায়ের সার্বিক উন্নতির উপর কোভিড-১৯ এর প্রভাব তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ফার্ম ভ্যালুতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এই পরিস্থিতিতে, বিনিয়োগকারীদেরকে সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে হলে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং সম্ভাব্য ক্ষতি বিশ্লেষণ করে সম্ভাবনাময় খাত গুলো চিহ্নিত করে নতুন করে তাদের বিনিয়োগ বা পোর্টফলিও তৈরি করতে হবে।
চিত্র ১ -এ ম্যাপিং এর মাধ্যমে শেয়ার বাজারে কোভিড-১৯ এর যে প্রভাব দেখানো হয়েছে, তাতে কোভিড থেকে সুরক্ষার কোন বিশেষ নীতিমালা নেই ধরে নেয়া হয়েছে। যেহেতু বর্তমানে আমাদের দেশের শেয়ার বাজার গুলোতে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের প্রথম থেকে তৃতীয় ধাপের প্রভাব মক্ষ্য করা যাচ্ছে, এই মুহূর্তে নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে নীতিমালা প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে সম্ভাব্য ক্ষতি এড়ানো সম্ভব।
এটি অবশ্যস্বীকার্য যে, এই মুহূর্তে দেশ এবং জাতির প্রধান লক্ষ্য মহামারীর প্রভাব থেকেমুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত এর বিরুদ্ধে লড়াই করা, সুস্থতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং জীবন বাঁচানো। এই পরিস্থিতিতে সরকারের মূল লক্ষ্য মহামারী মোকাবেলায় সকল সম্পদকে কাজে লাগানো। অর্থাৎ এই মুহূর্তে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন এবং পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে শেয়ারবাজার পুনরুদ্ধারের দিকে সরকারের মনোনিবেশ করার সম্ভাবনা খুবই কম। তবুও, মহামারীকালীন সময়েও বাজারের মূল বিষয়গুলো পুনর্নির্মাণে নবগঠিত বিএসইসি কমিশনের ভূমিকার বিষয়ে বিনিয়োগকারীরা আশাবাদী।
সম্পূর্ণ রিপোর্ট ডাউনলোড করতে ক্লিক করুনঃ আর্থিক বাজারে কোভিড-১৯ এর প্রভাব- কি হবে দেশের শেয়ার বাজারে
Kazi Mozammel Hoque
July 9, 2020আমার মনে হয় এই সময়ে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং সম্ভাব্য ক্ষতি বিশ্লেষণ করে সম্ভাবনাময় খাত গুলো চিহ্নিত করে যার যার সাধ্যমত নতুন করে বিনিয়োগ করে পোর্টফলিও তৈরি করতে হবে।
admin
July 12, 2020আপনার মতামত আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ
Rakibul Hasan
July 10, 2020Well explained
admin
July 12, 2020Thanks