বিশ্বের প্রায় সকল শেয়ার বাজার ২০২২ সালে টালমাটাল অবস্থানে ছিল। বাংলাদেশের শেয়ার বাজার এর ব্যতিক্রম নয়। বাংলাদেশের শেয়ার বাজারে ২০২২ সালে সূচক ও আর্থিক লেনদেনের মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায় । বছরটির প্রথম সপ্তাহে দেশের পুঁজিবাজারের সকল সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা নিয়ে লেনদেন হয়েছে। এতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন এক সপ্তাহেই সাড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকার ওপরে বেড়েছে। দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেন দৈনিক দেড় হাজার কোটি টাকা অতিক্রম করেছিল। সার্বিকভাবে বড় ধরনের উত্থান দিয়ে ২০২২ সাল শুরু হলেও ষষ্ঠ সপ্তাহ পর থেকে ক্রমান্বয়ে বাজার সূচকের পতন লক্ষ্য করা যায়। বাজার তথ্য অনুযায়ী, বাজার মূলধন কমে যায় প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকার বেশী। ফলে বাজারে বিনিয়োগকারীদের কম অংশগ্রহণ এবং দরপতন ঠেকাতে আবারও ২৮ জুলাই ২০২২ তারিখে ফ্লোর প্রাইজ আরোপ করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন। সার্বিকভাবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বৈশ্বিক সংকটের প্রভাবে ২০২২ সাল জুড়েই মন্দার মধ্যে ছিল দেশের শেয়ারবাজার । বছরটিতে মুনাফার বদলে লোকসানের পাল্লা ভারী হয়েছে বিনিয়োগকারীদের। বাজারে ২০২২ সালে গড় লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়ায় ৯৬০ কোটি টাকা। ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচকের ঋনাত্নক প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায়৯.৪%।
ফ্লোর প্রাইস হলো বাজারে পণ্য বা সেবার মূল্য ধরে রাখার একটি মাধ্যম। সাধারনত যেকোনো সেবা বা পণ্যের মূল্য চাহিদা ও যোগানের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। ফ্লোর প্রাইজ হলো বাজার নিয়ন্ত্রনকারী প্রতিষ্ঠান কতৃক পণ্যের নির্ধারিত মূল্য, এই নির্ধারিত মূল্যেটি থেকে নিচে নামতে না পারলেও বৃদ্ধি পাওয়ার বিস্তর সুযোগ থাকে।
মূলত বাজার মূলধন ও সূচক একটি নিদির্ষ্ট পর্যায়ে ধরে রেখে বিনিয়োগকারীদের আস্থা দৃঢ় রাখার ঊদ্দেশ্যে ফ্লোর প্রাইজ দেওয়া হয়।
শেয়ার বাজার কীসের উপর ভিত্তি করে ওঠা নামা করে ?
প্রতিটি পণ্য বা সেবার মূল্য চাহিদা এবং যোগান (সরবরাহ) সাথে সম্পর্কিত। চাহিদা বাড়লে দাম বাড়বে এবং চাহিদা কমলে দাম কমবে। তেমনি স্টক এক্সচেঞ্জ এ শেয়ারের চাহিদা বাড়লে শেয়ার প্রাইস বাড়ে এবং চাহিদা কমলে শেয়ার প্রাইস কমে । ডলার মূল্য ,জিডিপি (GDP) এবং রিজার্ভ থেকে শুরু করে বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি অর্থনৈতিক সূচকের উপর শেয়ার বাজারের উত্থান ও পতন নির্ভর করে। এছাড়া কোম্পানির প্রতি বছরের EPS, NAV, PE ratio & Dividend এর বৃদ্ধি ও হ্রাস শেয়ার প্রাইজকে প্রভাবিত করে। বৈশ্বিক নেতিবাচক পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স কমে আসা, রিজার্ভ কমে যাওয়া ডলার মূল্য বৃদ্ধির সাথে বাজারে তারল্য সংকট দেখা দেয়। ফলে বাজার সূচক কমতে শুরু করে। বাজারের পতন ঠেকাতে বিএসইসি (BSEC) শেয়ার বাজারে ফ্লোর প্রাইজ (Floor Price) এবং নতুন সার্কিট ব্রেকার (Circuit Breaker) রুলস জারি করে।
বাংলাদেশের শেয়ার বাজারের অবস্থা
বর্তমানে দেশের পুঁজিবাজার একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে বলে ধারণা করা যায়। নতুন বছর ২০২৩ সালের প্রথমদিন শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের জন্য মোটেও ভালো যায়নি। সর্বপ্রথম পাকিস্থানে index এ ফ্লোর প্রাইজ দেওয়া হয়েছিল। বিশ্বের কোথাও শেয়ারে ফ্লোর প্রাইস পদ্ধিতিটি প্রচলিত না থাকলেও বিএসইসি (BSEC) এর নতুন সার্কুলার অনুযায়ী বাংলাদেশের শেয়ার বাজারে ফ্লোর প্রাইস (Floor Price) এবং নতুন সার্কিট ব্রেকার (Circuit Breaker) রুলস করা হয়েছে এবং ১৯ মার্চ ২০২০ তারিখে একটি প্রজ্ঞাপন জারী করা হয়েছে। বাজারে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বেশ কমে যায়, ফলে ২৮ জুলাই ২০২২ তারিখে বাজার সূচক 6000 পয়েন্টের নিচে নেমে যাওয়ার পরে নতুন করে সিকিউরিটিজ নিয়ন্ত্রক সংস্থা তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজগুলির অবাধ পতন রোধ করতে ফ্লোরের দাম আরোপ করে।
২৮ জুলাই ২০২২ তারিখে জারি করা এক আদেশে, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) উক্ত বছরের ২৪ জুলাই থেকে ২৮ শে জুলাই পর্যন্ত পাঁচ দিনের গড় সমাপনী মূল্যকে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজের জন্য ফ্লোর প্রাইজ নির্ধারণ করে। অর্থাৎ দশ শতাংশের বেশী দাম বাড়তে পারবে তবে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজের বাজার মূল্য তাদের নিজ নিজ ফ্লোরের দামের নিচে যেতে পারবে না।
এরপর লেনদেন বৃদ্ধির জন্য ১৫ নভেম্বর ২০২২ ব্লক মার্কেটে ফ্লোর প্রাইজের নিচে লেনদেনের সুযোগ করে দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন । ফলশ্রুতিতে নির্ধারিত হয় নতুন রূল তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট ব্লক মার্কেটে ফ্লোর প্রাইজের থেকে ১০ শতাংশ কমে লেনদেন করতে পারবে ।
তথ্য সূত্রঃ Research & Innovation Lab (RIL) Database
২১ ডিসেম্বর ২০২২ শেয়ারবাজারের লেনদেনে গতি ফেরাতে বিএসইসি অবশেষে তালিকাভুক্ত ১৬৮ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্যস্তর বা ফ্লোর প্রাইজ তুলে নেয়। যা ২২ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়।
ফ্লোর প্রাইজ তুলে নেওয়া হলেও উক্ত শেয়ার ও ইউনিটের দাম এক দিনে সর্বোচ্চ ১ শতাংশের বেশি কমতে পারবে না। তবে পূর্ববতী নিয়ম অনুযায়ী, এসব সিকিউরিটিজের দাম এক দিনে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারবে। দেশের শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ রক্ষা ও বাজার মূলধন রক্ষার্থে ফ্লোর প্রাইস দেওয়া হয়েছিল এবং ফ্লোর প্রাইজ তুলে নেওয়ায় লেনদেন কিছুটা বৃদ্ধির পায়। তবে ফ্লোর প্রাইজ কোন স্থায়ী সমাধান নয়। এছাড়া দেশের তারল্য সংকটের একটা প্রভাব পরেছে দেশের শেয়ার বাজারে।
সূত্র: The Business Standard News Report
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বৈশ্বিক সংকটের প্রভাবে ২০২২ সাল জুড়েই মন্দার মধ্যে ছিল দেশের সার্বিক অর্থনীতি । যুদ্ধের রেশ জিইয়ে রেখেই এলো নতুন বছর ২০২৩। বছরটিতে বৈশ্বিক খাদ্য সংকটের আভাস দিয়ে রেখেছে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা। সব মিলিয়ে চলতি বছর শেয়ারবাজার বিনিয়োগকারীদের কতটা স্বস্তি দেবে তা নিয়ে আশংকা রয়েছে বিশ্লেষকদের মধ্যে।
বৈশ্বিক সংকটের পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচন এর প্রভাবে চলতি বছর শেয়ারবাজার কেমন যাবে, তা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে বিভক্ত শেয়ারবাজার বিশ্লেষকরা। কারও মতে, ২০২২ সালজুড়ে শেয়ারবাজারে মন্দাভাব থাকায় বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বিনিয়োগের জন্য আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। ফলে ধারনা করা হয় নতুন বছর ২০২৩ সালে শেয়ারবাজার ভালো থাকতে পারে ।
অন্যপক্ষ বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে যে বৈশ্বিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে তা এখনো কাটেনি। এতে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ নতুন বিনিয়োগ করা থেকে বিরত থাকতে পারে। সুতরাং ২০২৩ সালে শেয়ারবাজার মন্দা কাটিয়ে উঠবে এমন আশা করা কঠিন। বরং বৈশ্বিক সংকটকে ঘিরে ২০২৩ সালেও শেয়ারবাজার চাপে থাকতে পারে বলে ধারনা করা যায়।
Mozammel
February 2, 2023Nice review…thanks..
admin
March 2, 2023Thank you sir
Anup Kumar Bhowmik
February 4, 2023Keep posting.
admin
March 2, 2023Sure sir, keep reading our blogs
Sheikh Sorwardi
August 10, 2023Very useful information.
admin
September 10, 2023Thank you sir
admin
January 3, 2024Thank you sir for your feedback.